আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি থেকে ৪৫ কিমি দূরে ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় গত সোমবারের লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়েক চার ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। তাঁদের আটক করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ চারজনের সঙ্গে পাকিস্তানের জইশ-ই-মহম্মদের যোগসূত্র রয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সন্দেহভাজনদের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।

গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি হুন্ডাই আই২০ গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হন। দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার পরে নিশ্চত হওয়া গিয়েছে গাড়িটির চালক ছিলেন ডা. উমর মহম্মদ। আরও তিনজন চিকিৎসক ডা. মুজাম্মিল শাকিল, ডা. আদিল রাথের এবং ডাঃ শাহিদ সাইদ এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

সূত্র এবং পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তার রহস্য উন্মোচন করেছে।

তহবিল সংগ্রহ

দিল্লি জুড়ে জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য এই চার চিকিৎসক ২০ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দিনে দিল্লি-এনসিআর জুড়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

তহবিলে অর্থ উমরের কাছে রাখা হয়েছিল। পরে, তাঁরা গুরুগ্রাম, নুহ এবং আশেপাশের অন্যান্য শহরের বাজার থেকে প্রায় ২৬ কুইন্টাল এনপিকে সার কিনেছিল। এতে তাঁদের প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এই সারটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরিতে ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছিল এবং বিস্ফোরণে ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।

পরিকল্পনা

৭০ একর জমির উপর বিস্তৃত আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়টি হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্ত থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তদন্তে সামনে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রে জড়িত ডাক্তারদের জন্য বৈঠকখানা ছিল। উমর এবং তাঁর সহযোগীরা গোপনে ১৭ নম্বর ভবনে মিলিত হতেন। ভবনের ১৩ নম্বর কক্ষটি ছিল ডা. মুজাম্মিলের। সেখানে সকলে প্রায়শই মিলিত হত। পুলিশের সন্দেহ, এই কক্ষেই তাঁরা দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল।

রাসায়নিক পাচার

জঙ্গিরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগার থেকে বোমা তৈরির জন্য রাসায়নিক পাচারের পরিকল্পনা করেছিল। পরীক্ষাগারটি মুজাম্মিলের ঘর থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য উমর এবং শাহিন রাসায়নিকগুলি জোগাড় করতে সক্ষম হন। এরপর রাসায়নিক ফরিদাবাদের ধৌজ এবং তাগা গ্রামে ভাড়া করা জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

মুজাম্মিলের ঘরটি এখন সিল করে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে। সাংকেতিক শব্দ এবং এনক্রিপ্টেড বার্তা ভরা দু’টি ডায়েরিও উদ্ধার হয়েছে। ডায়েরিগুলিতে ‘অপারেশন’ শব্দটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ১৩ নং কক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ এবং ডিজিটাল ডেটা পেয়েছেন। পুলিশ এখন সন্দেহ করছে যে ল্যাব থেকে পাচার হওয়া রাসায়নিকগুলি অল্প পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে অক্সিডাইজারের সঙ্গে মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হত।

সূত্রের খবর, দিল্লি বিস্ফোরণে অনির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং জ্বালানি তেলযুক্ত (ANFO) একটি বিস্ফোরক যৌগ ব্যবহার করা হয়েছিল। ফরিদাবাদে অভিযানের সময়, পুলিশ ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট-সহ ২০০০ কেজিরও বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় তরফে কী বলা হয়েছে

আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দিল্লি বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং দাবি করেছে যে এই ঘটনায় আটক চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা আরও জানতে পেরেছি যে আমাদের দুই চিকিৎসককে তদন্তকারী সংস্থাগুলি আটক করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের সরকারি পদে কর্মরত ব্যক্তিদের ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই”। একটি বিবৃতিতে, উপাচার্য ভূপিন্দর কৌর আনান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে ভিত্তিহীন প্রতিবেদনেরও নিন্দা করেছেন।