আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা জেলায় রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের (RPF) হেফাজতে এক দলিত যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনার জেরে তিন আরপিএফ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তদন্তের নামে পুলিশি নির্যাতনের ফলেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির নাম সঞ্জয় কুমার সোনকার (৩৫)। তিনি গোণ্ডা জেলার বাসিন্দা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) আরপিএফের একটি দল তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। জানা গেছে, বারুয়া চক রেলওয়ে স্টেশনে একটি মালগাড়ি থেকে তেল চুরির ঘটনার তদন্ত করছিল আরপিএফ। সেই মামলার সূত্র ধরেই সঞ্জয়কে আটক করা হয়েছিল।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিন আরপিএফ কর্মকর্তা – সাব-ইনস্পেক্টর সুরেন্দ্র কুমার, করণ সিং যাদব এবং কনস্টেবল অমিত কুমার যাদব – সঞ্জয়কে নির্যাতন করে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করেন। সঞ্জয়ের ভাই রাজু সোনকারের অভিযোগ, ওই কর্মকর্তারা হেফাজতে নির্মমভাবে মারধর করেন, যার ফলে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
আরপিএফের সিনিয়র কমান্ড্যান্ট চন্দ্র মোহন মিশ্র জানান, বারুয়া চক স্টেশনের চুরির ঘটনায় একটি সিসিটিভি ফুটেজে তিনজনকে দেখা যায় তেল চুরি করে কাছের মাঠে লুকোতে। সেই ভিডিওর সূত্রে এক সন্দেহভাজনকে আটক করা হলে, সে জেরার সময় সঞ্জয়ের নাম বলে দেয়। পরে আরপিএফ সদস্যরা সঞ্জয়কে ধরে এবং তার কাছ থেকে তেল উদ্ধার করার দাবি করেন। মিশ্রর বক্তব্য অনুযায়ী, “তেল উদ্ধারের প্রক্রিয়ার সময়ই সঞ্জয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।”
আরপিএফের কর্মকর্তারা তাঁকে দ্রুত একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকরা সঞ্জয়কে মৃত ঘোষণা করেন।
অটোপসি রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি। দেহে বড় কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি, তবে কয়েকটি হালকা আঁচড়ের দাগ পাওয়া গেছে, যা মৃত্যু ঘটানোর মতো নয় বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা। গোণ্ডা শহরের সার্কেল অফিসার আনন্দ কুমার রাই জানান, “ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব নয়।”
এই ঘটনার পর আরপিএফ কর্তৃপক্ষ তিন অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং একটি বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃত সঞ্জয়ের পরিবারের দাবি, “চুরির মামলার অজুহাতে আমাদের ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। আমরা এর সুবিচার চাই।”
স্থানীয় দলিত সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরাও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, “রেল পুলিশের হেফাজতে একজন দলিতের মৃত্যু কোনও দুর্ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের আরেকটি দৃষ্টান্ত।” গোণ্ডা জেলায় এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত নিরপেক্ষভাবে চলবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
