আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সাম্প্রতিক সময়ে কমছে বলে সরকারি পরিসংখ্যান জানালেও, জনস্বাস্থ্যের সামনে এক গভীরতর সংকট রয়ে গেছে—বিশ্বাসের সংকট। মহামারির প্রথম ঢেউয়ে রাষ্ট্রের নির্দেশে ভরসা রেখে যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন, আজ তাঁদের অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন: "এই বুস্টারটা কি সত্যিই দরকার?", "এই টিকাটা আমার সন্তানের জন্য নিরাপদ তো?", "ওরা এত জোর করছে কেন?"
ভারতের কোভিড টিকাকরণ অভিযানকে সাফল্যের গল্প হিসেবে তুলে ধরা হলেও বাস্তবে বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ভয়, অনিশ্চয়তা ও বাধ্যবাধকতার বোধ থেকে। মধ্যপ্রদেশ, অসম বা দিল্লিতে যেখানে বেতন ও রেশন আটকে দিয়ে টিকা নিতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেখানে অংশগ্রহণ ছিল, কিন্তু সম্মতি ছিল না। জনস্বাস্থ্যের ভাষা ছিল ‘লক্ষ্যমাত্রা’, ‘আচ্ছাদন’ ও ‘ড্যাশবোর্ড’, কিন্তু অনুপস্থিত ছিল সংলাপ, শ্রবণ ও সহানুভূতির চর্চা। বিজ্ঞানকে প্রচারের হাতিয়ার বানিয়ে জনগণকে নীরব অনুসারীতে রূপান্তর করার এই প্রচেষ্টাই আজ ভ্যাকসিন সন্দেহ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে টিকা-সংশয় এবং অ্যান্টি-ভ্যাক্স মনোভাব মূলত এমন এক বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির প্রতিফলন, যা জনগণের প্রশ্ন ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই অবিশ্বাস ইতিহাস, শ্রেণি, লিঙ্গ, এবং জাতিভেদে গঠিত দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল। আজকের চ্যালেঞ্জ শুধু ভুল তথ্যের মোকাবিলা নয়; প্রয়োজন রাষ্ট্র, সমাজ ও বিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুনভাবে চিন্তা করা। জনস্বাস্থ্য যদি গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়, তবে তা শুরু হওয়া উচিত প্রশ্ন, সংলাপ এবং শ্রদ্ধা দিয়ে—না যে কে কত টিকা নিল, তা গুনে।
এই সংকটের সমাধান আরেকটি ঘোষণা নয়, বরং নতুন এক জনস্বাস্থ্য দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, আগামী ঢেউ যখন আসবে, প্রশ্নটা হবে: "লোকেরা বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করে কি না?" নয়—"বিজ্ঞান কি এখনও তাদের বিশ্বাস করে?"
