আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্র ফের খবরে উঠে এসছে এক ঘটনা ঘিরে৷ সম্প্রতি লোনাভলায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এক যুবতী স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাঁকে তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ মিলে একটি চলন্ত গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। জানা গিয়েছে, অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় তিনি একা ছিলেন। হঠাৎই তিন ব্যক্তি তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর ওই তিন অভিযুক্ত তাঁকে একটি অপরিচিত স্থানে নিয়ে যায়। তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে তারা যুবতীকে একটি অচেনা এলাকায় ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবতীর এমন গুরুতর অভিযোগে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাস্থল শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়। এমনকি সম্ভাব্য সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু তদন্ত এগোতে থাকলে পুলিশ তাঁর বর্ণনায় একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পায়। সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল লোকেশন ডেটার সাহায্যে দেখা গিয়েছে, অভিযোগকারিণীর সঙ্গে ওইদিন শুধু একজন পুরুষ ছিলেন। তাঁকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন।
ধীরে ধীরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ওই যুবতী শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন যে, ঘটনাটি ঠিক তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী ঘটেনি। তিনি যে তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁদের কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি জানান, যার সঙ্গে তিনি ওইদিন সময় কাটিয়েছিলেন, তিনি তাঁর পূর্বপরিচিত একজন পুরুষ ছিলেন। তাঁরা দুজন স্বেচ্ছায় একসঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন।
প্রথমে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ এবং অপহরণের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। শুরু হয় তদন্ত৷ ঘটনার জেরে পুলিশ এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে যুবতীর দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে তুলনা করে। এরপরই বেরিয়ে আসে ঘটনায় একের পর এক অসঙ্গতি।
পরবর্তীতে তদন্তে দেখা গিয়েছে, যুবতীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে ওই সময়ে শুধু একজন পুরুষ ছিলেন। যাঁকে তিনি আগেই চিনতেন। ৩৫ বছরের এই যুবকের সঙ্গে তাঁর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গিয়েছে৷ সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, একটি গাড়ি থেকে এক পুরুষ তাঁকে নামিয়ে দিচ্ছেন। এহেন অবস্থায় তাঁদের মধ্যে আচমকা বচসা শুরু হয়। কথা-কাটাকাটি বাড়লে একটা পর্যায়ে যুবক যুবতীকে রাস্তায় ফেলে দেন। আশেপাশে আর কোনও তৃতীয় ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। যুবতীর বর্ণনায় যে তিনজন অপরিচিত পুরুষের কথা বলা হয়েছিল, তাঁদের কোনও অস্তিত্ব বা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
পুলিশ আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে, যুবতীর বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, এই ঘটনা ইচ্ছাকৃতভাবে সাজানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সম্ভাব্য মিথ্যা মামলার দিক থেকে তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত হিসেবে যাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি লোনাভালার তুংগারলি এলাকার ৩৫ বছর বয়সী এক যুবক। যাঁর সঙ্গে ওই যুবতীর পূর্বে সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।
এই ধরণের ভুয়ো অভিযোগ প্রকৃত ধর্ষণের শিকার মহিলাদের ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। 'এমন ঘটনা সমাজে ভুয়ো মামলা ও প্রকৃত অপরাধের মধ্যে সীমারেখা ধ্বংস করে দেয়।' এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে৷
