আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লাল কেল্লার কাছে সোমবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণ। ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অশোক কুমার। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের আমরোহা-র বাসিন্দা অশোকের উপরেই নির্ভর করত তাঁর আট সদস্যের পরিবার। দুর্ঘটনায় ছেলের এমন মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা আমরোহা।
অশোক সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তিনি দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (ডিটিসি) বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও ওল্ড দিল্লি রুটের ক্লাস্টার বাসে তাঁর ডিউটি ছিল।
নিজের তুতো ভাই অশোকের নাম যখন পাপ্পু মৃতদের তালিকায় দেখলেন, তখন তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এলএনজেপি হাসপাতালের বাইরে সংবাদমাদ্যমকে পাপ্পু জানান, "আমি তালিকায় নাম দেখেই চিৎকার করে উঠলাম, 'এ তো আমার ভাই!' তারপর সবাইকে ফোন করে নিশ্চিত হলাম। ওর যে বাইকটা ছিল, সেটাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না।"
অশোক বিস্ফোরণের সময় কাজে ছিলেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে পাপ্পু বলেন, "হয়তো কাজ সেরে ফিরছিল, নয়তো কোথাও যাচ্ছিল। এই রাস্তা দিয়েই ও সবসময় যাতায়াত করত।"
লাল কেল্লা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে দিল্লির জগৎপুরে স্ত্রী, তিন মেয়ে আর এক ছেলে - এই চার সন্তানকে নিয়ে থাকতেন অশোক। পাপ্পু আরও জানান, "অশোকের মা সোমবতী গ্রামের বাড়িতে থাকেন। সঙ্গে ওর বড় ছেলে সুভাষ। সুভাষ প্রায়ই অসুস্থ থাকত। তাই সংসারের সব দায়িত্ব একা অশোককেই সামলাতে হতো।"
জানা গিয়েছে, অশোক দিনে বাসের কন্ডাক্টরি করতেন, আর রাতে বাড়তি আয়ের জন্য নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন।এইভাবেই তিনি সংসার চালাতেন। বিস্ফোরণে যাঁরা আহত হয়েছেন, চিকিৎসার জন্য এলএনজেপি হাসপাতালের বাইরে সেই স্বজন হারানো পরিবারগুলির কান্নার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। নিখোঁজদের খোঁজে হাহাকার করছেন অনেকে। আর একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে দেখা যায়, তিনি তাঁর আত্মীয় লোকেশ কুমার গুপ্তের খোঁজ করছেন। ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে লোকেশ কুমার গুপ্তের দেখা করার কথা ছিল তাঁর।
বৃদ্ধ জানান, "লোকেশ কুমার গুপ্ত আমার আত্মীয়। সন্ধ্যাবেলা আমরা দু'জনেই স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতাল থেকে একসঙ্গে বেরিয়েছিলাম। লোকেশ চাঁদনি চক যাওয়ার জন্য মেট্রোয় উঠেছিল।" তারপর থেকে লোকেশ এখনও নিখোঁজ।
দিল্লি বিস্ফোরণের আরেক শিকার হলেন অমর কাটারিয়া। তিনি ওষুধ ব্যবসা করতেন। শ্রীনীবাসপুরীর বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী কাটারিয়া সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। লাল কেল্লা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথ প্যালেসে তাঁর ওষুধের দোকান ছিল। সেটি বন্ধ করে তিনি যখন বাড়ির পথে, তখনই এই বিস্ফোরণ ঘটে। অমর কাটারিয়ার বাবাকে এলএনজেপি হাসপাতালের বাইরে হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখা যায়।
