আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘিলু খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল নয় বছরের এক নাবালিকার। সাধারণ জ্বরের মতো উপসর্গ ছিল তার। কিন্তু মৃত্যুর পর জানা গিয়েছে, সে ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে মারা গেছে। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এক কুয়োয় ঘিলু খেকো অ্যামিবার খোঁজ পাওয়া গেছে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট, মঙ্গলবার কেরলের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নাবালিকা যে এলাকার বাসিন্দা ছিল, ওই অঞ্চলেই একটি কুয়োর মধ্যে ব্রেন ইটিং অ্যামিবার হদিশ পাওয়া গেছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নাবালিকা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ৪৮ ঘণ্টা পরেই তার মৃত্যু হয়েছে। ওই কুয়ো থেকে যারা যারা জল খান , ওই জল ব্যবহার করেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা শুরু করেছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। 

অ্যামিবিক এনসেফেলাইটিস মস্তিষ্কজনিত এক বিরল সংক্রমণ। গত সপ্তাহেই কেরলের থামারাসেরি জেলায় এই রোগের হদিশ পাওয়া যায়। মৃত নাবালিকার দাদাকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কারণ, তিনিও বর্তমানে জ্বর আক্রান্ত। পরিবার সূত্রে খবর, গত ১৩ আগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছিল ওই নাবালিকা। ওষুধ খেয়েও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি করার পরেও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। 

আরও পড়ুন: ফের গভীর নিম্নচাপ, অঝোরে বৃষ্টি কলকাতায়, আজ ২০ জেলা টালমাটাল হবে তুমুল বৃষ্টিতে, রইল আবহাওয়ার মেগা আপডেট

এরপর কোঝিকোড়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাবালিকাকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। উচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার পরেও, ঘিলু খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। 

ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণের উপসর্গ কী কী? 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নাকের মধ্যে দিয়ে ব্রেন ইটিং অ্যামিবা শরীরে প্রবেশ করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই গলা ব্যথা, ঝিমুনি ভাব, মাথা যন্ত্রণা, ঘনঘন বমি, ঘাড়ে যন্ত্রণা, জ্বর, হাঁচির মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। এবং স্বাদ ও গন্ধ অনেক সময় পাওয়া যায় না। তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায় এবং মৃত্যু হয়। 

চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, নাবালিকার মৃত্যুর পর গত ১৫ আগস্ট কোঝিকোড়ে মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষার পরেই জানা গেছে, ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে রাজ্য জুড়ে আবারও আতঙ্ক ছড়ায়। 

চলতি বছরে কেরলের এই জেলাই এখনও পর্যন্ত ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে আটজনের আক্রান্ত হওয়ার‌ খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একই রোগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও দু’জন কেরলের বাসিন্দা। তিন মাসের এক শিশুও আক্রান্ত। তিনটি ঘটনাই কোঝিকোড় জেলার। এই ধরনের অ্যামিবা পুকুর, লেক, নদী ও কুয়োর দূষিত জলে পাওয়া যায়। 

তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে ভারতে প্রথমবার ব্রেন ইটিং অ্যামিবার আক্রান্তের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল। ২০১৬ সালে কেরলে প্রথমবার এই রোগ ধরা পড়ে। গতবছর, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র কেরলেই ৩৬ জন ঘিলু খেকো অ্যামিবা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। চলতি বছরেও ক্রমেই বাড়ছে ঘিলু খেকো অ্যামিবার সংক্রমণের সংখ্যা। যা ঘিরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।