আজকাল ওয়েবডেস্ক: পেয়িং গেস্টের বিছানায় ছারপোকার উপদ্রব। নিত্যদিন এই ঝামেলা ঘিরে মালিককে নালিশ জানিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অনুপস্থিতিতে ঘরে ঘরে ছারপোকা মারার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছিল। পরদিন সকালেই মর্মান্তিক পরিণতি এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রের। কীটনাশকের উপস্থিতিতে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেঙ্গালুরুর এক পেয়িং গেস্টে ২২ বছর বয়সি এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্র আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতির বাসিন্দা ছিলেন। বেঙ্গালুরুর এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। পেয়িং গেস্টের ঘরে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে দমবন্ধ হয়ে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যেদিন ঘটনাটি ঘটেছে তার আগের রাতে পেয়িং গেস্টের সব ঘরে বিছানায় ছারপোকা মারার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছিল।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের নাম, পবন। তিনি সাউথ ইস্ট বেঙ্গালুরুর হল থানার অন্তর্গত একটি পেয়িং গেস্টে থাকতেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে। পবন ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই পেয়িং গেস্টের কর্মীরা ঘরে ঘরে ছারপোকা মারার কীটনাশক স্প্রে করেছিলেন। পবন বেঙ্গালুরুতে ফিরেছিলেন রবিবার। সেই রাতে নিজের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রথমেই তাঁর ঘরে ঢুকে অস্বস্তি শুরু হয়েছিল।
সোমবার সকালে তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পবন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বি টেক ডিগ্রি শেষ করার পর আরও কিছু কোর্স করছিলেন। চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এক সপ্তাহ আগেই বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই পেয়িং গেস্টের কর্মীরা ঘরে ঘরে পেস্ট কন্ট্রোল করেন। বিছানার আশেপাশে ছারপোকার মারার কীটনাশক স্প্রে করেন।
রহস্যমৃত্যুর খবর পেয়েই হল থানার পুলিশ ওই পেয়িং গেস্টে পৌঁছয়। প্রতিটি ঘরেই কীটনাশকের উপস্থিতি নজরে পড়েছে তাদের। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ঘরগুলি বন্ধ ছিল। বাতাস চলাচলের রাস্তা কম ছিল। তার মধ্যেই কীটনাশকে ভরে যায় গোটা ঘর। এর জেরেই দমবন্ধ হয়ে ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। এমনকী কীটনাশক স্প্রে করার পরের ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখা ছিল। সেই ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত হয়ে পবন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাতেই ঘটে বিপত্তি।
ইতিমধ্যেই মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ জানা যাবে। পেয়িং গেস্টের ঘর থেকে কীটনাশকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ছাত্রের পরিবার ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে বেঙ্গালুরুতে। রহস্যমৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। পেয়িং গেস্টের গাফিলতি নাকি পেস্ট কন্ট্রোল কর্মীদের দোষে ঘটনাটি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘিরে বেঙ্গালুরুর বাকি অন্যান্য পেয়িং গেস্ট, হস্টেলের আবাসিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চাকরি, উচ্চশিক্ষার সূত্রে অনেকেই বেঙ্গালুরুতে এসে পেয়িং গেস্ট, হস্টেলে থাকেন। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, পড়ুয়াদের অভিযোগ রয়েছে পেস্ট কন্ট্রোল টিমের গাফিলতির বিরুদ্ধে। ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
ওই পেয়িং গেস্টের বাকি সদস্যরা জানিয়েছেন, মালিক ও কর্মীরা কেউই জানাননি, তাঁদের অনুপস্থিতিতে ঘরে ঘরে ছারপোকা মারার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছিল। ছারপোকার সমস্যা বহুদিন ধরেই ছিল। কীটনাশক স্প্রে করলে আগে থেকেই জানানো উচিত ছিল বলেই দাবি তাঁদের। কীটনাশক স্প্রে করে ঘর বন্ধ রাখার কারণেই বিপত্তি ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
