আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরু শহর শুধু তথ্যপ্রযুক্তির জন্যই বিখ্যাত নয়। এখানকার ট্র্যাফিক জ্যাম এবং কঠোর বাড়িওয়ালাদের জন্যও কম সমালোচিত নয় এই শহর। বহু ভাড়াটিয়াই অভিযোগ করেন, চুক্তির মেয়াদ শেষে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পরও মালিকরা জামানতের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করেন। অকারণে সেখান থেকে কাটছাঁট করেন। অনেক সময় আবার চুক্তিতে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও আচমকা অতিরিক্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয় অনেককে। এহেন নানা কারণে শহরে ভালো বাড়িওয়ালার দেখা প্রাউ পাওয়াই যায়না।

সম্প্রতি এক ব্যতিক্রমী ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। রেডিটে এক যুবক একটি পোস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সকলকে চমকে দেন। উত্তর ভারতের বাসিন্দা এই যুবক জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুর যে বাড়িতে তিনি প্রায় দুই বছর ধরে ভাড়া রয়েছেন, সেখানকার বাড়িওয়ালা তাঁকে শুধু সম্মান ও আন্তরিক ব্যবহারই নয়, বরং বাড়ি ছাড়ার সময় উপহার হিসেবে একটি রুপোর কড়া (সিলভার কড়া) দিয়েছেন। এ ঘটনাকে তিনি গর্বের সঙ্গে 'আমার ফ্লেক্স' বলে উল্লেখ করেছেন।

পোস্টটিতে তিনি লেখেন, 'আমার গর্ব এটা। আমি বেঙ্গালুরুতে এমন একজন বাড়িওয়ালা পেয়েছি যিনি বিদায়ের সময় আমাকে রুপার কড়া উপহার দিয়েছেন। এমন এক শহর যেখানে অনেক বাড়িওয়ালা জামানতের টাকাই ফেরত দেন না, সেখানে আমার মালিক আমাকে ছেলের মতো দেখেছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে তিনি নিজের বাড়তি স্কুটিও আমাকে দিয়ে দিতেন নানা সময়ে ব্যবহার করতে। এমন ব্যবহার আমি কখনও আশা করিনি।'

আরও পড়ুনঃ ক্রমাগত বৃষ্টিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা, বন্ধ একাধিক স্কুল, সতর্কতা জারি 

এই গল্প শুনে রেডিটে নেটিজেনদের নানা প্রতিক্রিয়া। একজন মন্তব্য করেন, 'তুমি এমন এক বাড়িওয়ালাকে পেয়েছ যিনি আট বিলিয়নের মধ্যে একজন।'  আরেকজন লেখেন, 'এটা তো ‘রেয়ার-এরও রেয়ার’ ঘটনা।' কেউ আবার বলেন, 'এইরকম মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রকাশ করা উচিত।' একজন আবার রসিকতা করে মন্তব্য করেন, 'তিনি শুধুই 'ল্যান্ড লর্ড' নন। তিনি 'লর্ড অফ দ্য রিংস' (যদিও রুপার)।'

 সব প্রতিক্রিয়া যে ইতিবাচক ছিল, তা নয়। কেউ কেউ নিজেদের হতাশা প্রকাশ করে লেখেন, 'আমার বাড়িওয়ালা  চুক্তিতে ৫% বাড়ানোর কথা লিখেও এখন ১৫% বাড়াতে চাইছেন।' এই ঘটনা বর্তমান অভিজ্ঞতাকে আরও ব্যতিক্রমী করে তুলেছে।

একজন ব্যবহারকারী বলেন,  তাঁর ধারণা ওই বাড়িওয়ালা খুব একা, তাই এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। কিন্তু যুবক তাঁর সেই ধারণা নাকচ করে জানান, তাঁর মালিক একেবারেই নিঃসঙ্গ নন। তিনি তাঁর স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে সপরিবারে থাকেন। এমনকি পরিবারের সকলের সঙ্গে হেসেখেলে থাকেন৷ 

যুবক আরও জানান, দুই বছর ধরে তিনি বহুবার ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে বাইরে খেতে গিয়েছেন। সিনেমা দেখতে গিয়েছেন। এমনকি কেনাকাটাও করেছেন। তিনি জানান তাঁকে কখনওই 'সাধারণ ভাড়াটিয়া' হিসেবে দেখেননি তাঁরা। বরং তাঁকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই  রেখে দেন। 

ঘটনার জেরে সবাই আলোচনা করছে শহরে চাপে-ঠাসা, স্বার্থান্ধ পরিবেশেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অন্যরকম। ভাড়াটিয়া-মালিক সম্পর্ক যেখানে কেবল অর্থনৈতিক লেনদেনে সীমাবদ্ধ থাকে, সেখানে এই ঘটনা অনন্য নজির। বর্তমানে এই ঘটনা অনেকের মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।