আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্মরত সংস্থায় কাজের চাপে আত্মহত্যার ঘটনা ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ, এবার আত্মহত্যা করেছেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিনিয়র অফিসার শিবশঙ্কর মিত্র। বৃহস্পতিবার রাতে পুনে জেলার বারামতিতে অবস্থিত ব্যাঙ্ক শাখার মধ্যেই আত্মঘাতী হন তিনি। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটও লিখে গিয়েছেন। সেখানে স্পষ্টভাবে কাজের চাপকে দায়ী করেছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ৪০-এর কোঠায় থাকা মিত্র চলতি মাসের ১১ তারিখেই ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার পদ থেকে পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ও অতিরিক্ত কাজের চাপের কথা উল্লেখ করে। বর্তমানে তিনি নোটিশ পিরিয়ডে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ব্যাঙ্কের কাজকর্ম শেষে ওই ব্যক্তি সহকর্মীদের বলেন, তিনি নিজেই ব্রাঞ্চ বন্ধ করে দেবেন। রাত ৯.৩০ নাগাদ সিকিউরিটি গার্ড ব্যাঙ্ক ছেড়ে চলে যান। এরপর ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী রাত ১০টা নাগাদ মিত্র গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি আগে থেকেই এক সহকর্মীকে দড়ি আনতে বলেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। রাত গভীর হলে শিবশঙ্কর বাড়ি না ফেরায় এবং ফোনেও না পেয়ে, চিন্তিত স্ত্রী খোঁজ করতে গিয়ে ব্যাঙ্কে যান। আলো জ্বলতে দেখে সন্দেহ হয়, কিন্তু ভিতর থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। পরে দরজা খুললে শিবশঙ্কর মিত্রর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
সুইসাইড নোটে তিনি কাউকে নির্দিষ্ট করে দোষারোপ করেননি, তবে কাজের চাপই তাঁকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে লিখে গেছেন। পুলিশ আরও জানায়, মিত্র চিকিৎসাধীনও ছিলেন কিছুদিন ধরে। এই ঘটনার পর ফের উঠে এসেছে কর্মস্থলের মানসিক চাপ ও ‘ওয়ার্কপ্লেস টক্সিসিটি’ নিয়ে প্রশ্ন। এর আগেও দেশে এমন একাধিক ঘটনা দেখা গিয়েছে। মে মাসে ওলার এআই ইউনিট ‘কৃত্রিম’-এর এক কর্মী নিখিল সোমবানশি আত্মহত্যা করেন চরম মানসিক চাপের কারণে। জুলাই মাসে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে আরও এক ঘটনা। পুণের এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ২৬ বছরের তরুণী আনা অগাস্টিন আত্মহত্যা করেন। মার্চে যোগ দেওয়ার মাত্র ৪ মাস পরেই আত্মঘাতী হন তিনি।
তাঁর মা অনিতা অগাস্টিনের লেখা একটি আবেগঘন খোলা চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি তাঁর মেয়ের সংস্থার চেয়ারম্যান রাজীব মেমানিকে আনার মৃত্যুর জন্য ‘অতিরিক্ত ওয়ার্কলোড’ এবং সংস্থার ‘নিষ্ঠুর মনোভাব’-কে দায়ী করেন। উল্লেখ্য, অনেক সময় কাজের চাপে স্ট্রেস পড়ে যায় ইন্টার্নদের ওপরেও। স্টার্টআপগুলিতে ইন্টার্নশিপ অত্যন্ত কঠিন। কঠোর পরিশ্রম তো রয়েছেই। কিন্তু সেভাবে পারিশ্রমিক মেলে না। বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একজন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শহরের স্টার্টআপগুলিতে ইন্টার্ন সংস্কৃতির ভয়াবহ বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছেন।
যা প্রায়শই তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের বা তাদের মূল্যায়নের কারণে শিরোনামে চলে আসে। তাঁর পোস্টে তিনি প্রতিষ্ঠাতাদের প্রাপ্ত বেতন এবং ইন্টার্নদের ভাতার মধ্যে যে বড় পার্থক্য রয়েছে সেটাই তুলে ধরেছেন। নিজের লিঙ্কডইন পোস্টে তিনি আরও বলেছেন যে কীভাবে ইন্টার্নদের কাজের মূল্যায়ন সেভাবে করাই হয় না। দেওয়া হয় না স্বীকৃতিও। ওই প্রতিষ্ঠাতার কথায় ‘বেঙ্গালুরু টেক লাইফ এর প্রতিষ্ঠাতা মাসে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা বেতন পান। আর ইন্টার্ন পান ১৫ হাজার টাকা। এমনকী প্রতিষ্ঠাতা রাত ২ টোয় ভয়েস মেসেজ পাঠান। বলা হয় ‘ভাই জরুরি সমাধান প্রয়োজন।’ ইন্টার্ন দ্রুত কাজ করলেও শেষে বলা হয় ‘তোমার দ্রুত কাজ করার মানসিকতার অভাব আছে।’
