আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকালবেলা শরীরচর্চার ক্লাসে আসেনি কিশোর। এরপর শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এরপর স্কুলের কাছেই মেলে মাত্র ১২ বছর বয়সি ওই কিশোরের মৃতদেহ৷ অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সিয়াং জেলা সৈনিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের দেহ ঘিরে সম্প্রতি চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর তাঁর দিদি এক গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, মৃত্যুর আগের রাতে সিনিয়র ছাত্ররা মিলে তাঁর ভাই হারোকে মারাত্মকভাবে অত্যাচার করেছিল। এটিই তার মৃত্যুর কারণ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিল যে হারো আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু হারোর দিদি তাডু লুনিয়া পরে ভাইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এটি সাধারণ আত্মহত্যা নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে ব়্যাগিং এবং লাগাতার শারীরিক নির্যাতন।
লুনিয়া ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও প্রকাশ করে সবটা সামনে আনেন। তিনি জানান, হারোর ডর্মিটরির ছাত্ররা বলেছে যে গত ৩১ অক্টোবর রাতে ক্লাস ১০ এবং ক্লাস ৮-এর মোট এগারো জন সিনিয়র ছাত্র মিলে ক্লাস ৭-এর ডর্মিটরিতে ঢুকেছিল। তখন কোনও ওয়ার্ডেন সেখানে ছিলেন না।
অভিযোগ, ওই সিনিয়ররা অন্য ছাত্রদের কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে থাকতে বাধ্য করে। এরপর শুধু হারোকে ধরে ক্লাস ১০-এর ডর্মিটরিতে নিয়ে যায়। লুনিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, আমার ভাইকে সেদিন রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। বন্ধ ঘরে কী ঘটেছিল, তা কেউ জানে না।"
ভাইকে হারানোর পর লুনিয়া রাজ্যের মানুষের কাছে ন্যায়বিচারের জন্য পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, "আজ আমি আমার ভাইকে হারালাম। এখন যদি আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়াই, কাল হয়তো অন্য কারওর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে।"
বর্তমানে পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পাশপাশি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্ত ওই আট জন নাবালক ছাত্রকে ইতিমধ্যেই আটক করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করানো হয়েছে। আপাতত তাদের স্কুলের উপাচার্যের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্যে তারা আরও তথ্যপ্রমাণ খুঁজছে।
অন্যদিকে, হিমাচলের সিমলায় এক নৃশংস ঘটনা। দলিত ছাত্রের উপর চরম অত্যাচার। হাড়হিম অভিযোগ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এক বছর ধরে চলেছে লাগাতার অত্যাচার। যৌন নির্যাতন। অভিযোগ, কেবল তথাকথিত ‘নিচু জাত’ হওয়ার কারণেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সহ তিন শিক্ষক মিলে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন মাত্র আট বছরের ওই ছাত্রের উপর। সম্প্রতি এই ভয়াবহ অত্যাচারের ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি সিমলার রোহরু মহকুমার একটি সরকারি স্কুলের। প্রথম শ্রেণির ওই দলিত ছাত্রের বাবা পুলিশে অভিযোগ করেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র এবং আরও দুই শিক্ষক (বাবু রাম ও কৃতিকা ঠাকুর) মিলে দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর ছেলেকে মারধর করতেন। ক্রমাগত মারের ফলে শিশুটির কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কান থেকে রক্তপাত শুরু হয় শিশুর। ব্যক্তি বলেন, "আমার ছেলে এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।"
এখানেই শেষ নয়৷ অভিযোগের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি এরপরই ছিল। ব্যক্তি জানান তাঁর ছেলের উপর কেবল যৌন নির্যাতন নয়, অমানবিক অত্যাচারও চালানো হয়৷ ছাত্রটির বাবার দাবি, ওই শিক্ষকেরা একদিন তাঁর ছেলেকে জোর করে স্কুলের শৌচাগারে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা ভয় দেখিয়ে শিশুটির প্যান্টের ভিতরে একটি বিষাক্ত কাঁকড়াবিছে ঢুকিয়ে দেন! "একটি নিষ্পাপ শিশুর ওপর এমন পাশবিক অত্যাচার কীভাবে শিক্ষকেরা করতে পারলেন", এই প্রশ্নই এখন ছুড়েছেন অনেকে।
এহেন ভয়াবহ ঘটনার জেরে ছাত্রের বাবা স্থানীয় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। খবর অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক-সহ অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই কঠোর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শুধু মারধরের জন্য নয়, জাতিগত বিদ্বেষ ও অমানবিক আচরণের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে মামলা করা হয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনে জাতপাতের এই নোংরা রাজনীতি এবং তার জেরে একটি শিশুর ওপর হওয়া এই নৃশংস অত্যাচারের ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত কী ব্যবস্থা নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে হিমাচল।
