আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণে একাধিক প্রাণহানি হয়, সেই ঘটনার তদন্ত এবার সরাসরি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (National Investigation Agency বা NIA)-র প্রধান বিজয় সাখারের হাতে। তিনি স্বয়ং একটি ১০ সদস্যের বিশেষ দল নিয়ে এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করলেন।

কেরল ক্যাডারের ১৯৯৬ ব্যাচের অফিসার বিজয় সাখারে। এর আগে তিনি এনআইএ-তে ইনস্পেক্টর জেনারেল পদে কাজ করেছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে এনআইএ-র ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু করার আগে আজই ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-র প্রধানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এনআইএ প্রধান।

এনআইএ সূত্রে খবর, বিজয় সাখারের নেতৃত্বে গঠিত এই দলে রয়েছেন এক জন ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, দু’জন ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং তিন জন সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ। বাকিরা সকলেই ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ পদমর্যাদার অফিসার।

বিস্ফোরণের নেপথ্যে থাকা জইশের কার্যক্ষমতা এবং তাদের অর্থের জোগান কোথা থেকে আসছে, তা উদ্ঘাটন করাই এই 'বিশেষ' দলের প্রধান লক্ষ্য। এই কারণে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, দিল্লি পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের কাছ থেকে জইশ সংক্রান্ত যাবতীয় কেস ডায়েরি নিজেদের হাতে তুলে নেবে এনআইএ।

তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই মুহূর্তে ১,০০০টিরও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি, তারা সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকলাপ এবং দিল্লির একাধিক জায়গা থেকে মোবাইল ফোনের তথ্যও সংগ্রহ করার কাজে জোর দিয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনার পরেই, রাত থেকে একাধিক জরুরি বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার সকালে নিজের বাসভবনেও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন তিনি। এরপর গতকাল তদন্তভার দেওয়া হয় এনআইএ-কে। 

তদন্তকারী দলের সদস্যরা এখনও পর্যন্ত এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন। এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যকলাপ, দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোনের তথ্য খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। 

সোমবার সন্ধ্যায় কেঁপে উঠেছিল লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন চত্বর। সোমবার পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ে। দিল্লি বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে,  বিস্ফোরণের পর লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনে পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। ঐতিহাসিক লালকেল্লা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য আগামী তিনদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। দফায় দফায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার রাতেই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন অমিত শাহ।  

সূত্রের খবর, অভিযুক্ত মুজাম্মিল তদন্তকারী আধিকারিকদের জেরায় জানিয়েছে, লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের বহু আগেই দিল্লিতে একাধিকবার বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। সে এবং উমর একযোগে লালকেল্লা চত্বরটিও পর্যবেক্ষণ করেছিল। অভিযুক্ত মুজাম্মিলের ফোনের তথ্য ঘেঁটেই তাকে জেরা করতে শুরু করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। 

জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, ২০২৬ সালে ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে বিস্ফোরণ ও হামলার ছক কষেছিল তারা। তার জন্য লালকেল্লা চত্বরটিই বেছে নিয়েছিল। যার জন্য নিয়মিত লালকেল্লার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করত। এমনকী চলতি বছরে দিওয়ালিতেও দিল্লির কোনও ভিড়ে ঠাসা এলাকায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। পরে সেটি বদলে যায়।