আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশে ফের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে৷ আমরোহা জেলার গজরৌলার আলিপুর এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইলো স্থানীয়রা। আট বছর বয়সী এক শিশুকে একটি বেওয়ারিশ কুকুর হঠাৎ করে আক্রমণ করে। সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে। পুরো ঘটনাটি একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। জানাজানি হতেই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য৷ 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত শিশুটির নাম আহাদ সাইফি। সে নিজের বাড়ির সামনেই খেলছিল। এমন সময়ে আচমকা একটি বেওয়ারিশ কুকুর তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে কামড়ে দেয়। ফলস্বরূপ শিশুটির হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলের একদম কাছাকাছি দু’জন পথচারী মোটরসাইকেলে করে আসছিলেন। এহেন দৃশ্য দেখে তাঁরা দ্রুত সেখানে ছুটে যান৷ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলান এবং শিশুটিকে কুকুরটির কবল থেকে উদ্ধার করেন।

ঘটনার পর আহতের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত শিশুকে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে (CHC) নিয়ে যায়। খবর অনুযায়ী, সেখানেই বর্তমানে শিশুর চিকিৎসা চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই একই কুকুরটি আগেও এলাকাটিতে বেশ কয়েকবার মানুষকে কামড়ে দিয়েছে।

ঘটনাটি এমন একটি দিনে ঘটেছে যেদিন সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি-এনসিআর এলাকায় ঘুরে বেড়ান সমস্ত বেওয়ারিশ কুকুরদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কোর্ট জানিয়েছে, এসব কুকুরকে আট সপ্তাহের মধ্যে নির্বীজকরণ ও আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। শুধু তাই নয় কোনওভাবেই যেন তারা আবার রাস্তায় না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি এই আদেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এটিকে সমর্থন করেছেন, আবার অনেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই আদেশের কঠোর সমালোচনা করে একে ‘অমানবিক’ ও ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় (পূর্বতন টুইটার) এ একটি পোস্টে লেখেন, 'দিল্লি-এনসিআরের সব বেওয়ারিশ কুকুর সরিয়ে দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ মানবিক ও বৈজ্ঞানিক নীতির প্রতি অবজ্ঞা। এরা কোনও ‘সমস্যা’ নয়, যাদের মুছে ফেলতে হবে। নির্বীজকরণ, টিকাকরণ ও কমিউনিটি কেয়ারের মাধ্যমে জননিরাপত্তা এবং পশু কল্যাণ উভয়ই রক্ষা করা সম্ভব।' 

এই ঘটনার জেরে স্থানীয়দের মনে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি উঠছে যেন এই ধরনের কুকুরদের দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

আরও পড়ুনঃ প্রকাশ্যে এ কী কাণ্ড? বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তির সঙ্গে যা করলেন সরকারি কর্মীরা, জানলে ভিরমি খাবেন...

প্রসঙ্গত মুম্বইয়ের বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (BMC) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ১০,৭৭৮টি পথকুকুর সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছে তারা। এই বিশাল সংখ্যক অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে পথকুকুর নিয়ে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতি শহরে বাড়তে থাকা পথকুকুর কেন্দ্রিক উদ্বেগকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। ফলস্বরূপ রাস্তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। রাস্তায় চলাফেরার সমস্যা থেকে শুরু করে র‍্যাবিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিকদের সমস্যা জানানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে বিএমসি (BMC) তাদের 'মাই বিএমসি' (MyBMC) মোবাইল অ্যাপ ও অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সম্প্রতি একটি অনলাইন অভিযোগের বিশেষ ব্যবস্থাপনা করেছে। জানা গিয়েছে, যে কেউ সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে, লগ ইন করে, সমস্যার অবস্থান ও ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অভিযোগ জমা করার পরই সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরে একটি রেফারেন্স নম্বর পাঠানো হয়। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার পর আপডেটও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এমনকি সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সপ্তাহে অন্তত তিনবার এসব নানা ধরণের অভিযোগ পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। বিএমসি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এর ফলে অভিযোগগুলো দ্রুত ট্র্যাক করা যাচ্ছে এবং সেই সমস্ত ঘটনাস্থলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

পথকুকুর নিয়ন্ত্রণ মুম্বইয়ের জন্য নতুন কোনও সমস্যা নয়। সূত্র অনুযায়ী ১৯৯৪ সাল থেকেই বিএমসি পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও র‍্যাবিস প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছে। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মোট ৪,২০,৩৪৫টি পথকুকুরকে নির্বীজ এবং টিকাদান করেছে বিএমসি।