আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিছুদিন আগেই আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬০ জন। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হল, এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই একশোর বেশি এয়ার ইন্ডিয়া পাইলট চলে যান মেডিক্যাল লিভে। এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জুনিয়র বিমান পরিবহন মন্ত্রী মুরলিধর মোহল। লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ওই দিন ৫১ জন কম্যান্ডার এবং ৬১ জন ফ্লাইট অফিসার ছুটির আবেদন জানান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন মন্ত্রী। তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, মেডিক্যাল টেস্টের সময় মানসিক স্বাস্থ্যের দ্রুত ও কার্যকর মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

পাশাপাশি, বিমান সংস্থা এবং এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষকে পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসারদের জন্য ‘স্বতন্ত্র এবং কাস্টমাইজড প্রশিক্ষণ পদ্ধতি’ চালু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করা যায়। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করারও। যাতে কর্মীদের মধ্যে একে অপরকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়। অন্যদিকে, বুধবার এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গত ১২ মাসে স্বেচ্ছায় করা কিছু তথ্য প্রকাশের ভিত্তিতে বিমান চলাচল নিরাপত্তা সংক্রান্ত চারটি শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে ডিজিসিএ। এগুলির মধ্যে রয়েছে কেবিন ক্রু-দের বিশ্রামের সময়সীমা লঙ্ঘন, প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত ত্রুটি এবং পরিচালন সংক্রান্ত অনিয়ম।

আরও পড়ুন: ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিতে ব্যাপক উৎসাহী জাভি, ‘টাকা নেই’, স্পষ্ট স্বীকারোক্তি ফেডারেশনের

এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নোটিশ গুলি পেয়েছি এবং যথাযথ উত্তর দেওয়া হবে। আমরা ক্রু ও যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। উল্লেখ্য, গত ছ’মাসে মোট ১৩বার শোকজ নোটিশ পেয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এর মধ্যে রয়েছে হংকং থেকে দিল্লিগামী একটি এয়ারবাস A321 বিমানে মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া আগুনের ঘটনা। বিমানটি অবতরণের পর এর অ্যাক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিটে আগুন ধরে যায়। যদিও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং কেউ আহত হননি। উল্লেখ্য, গত মাসে আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-ড্রিমলাইনার বিমান মাঝ আকাশে থ্রাস্ট হারিয়ে দু’কিলোমিটার দূরে একটি হোস্টেল ভবনে ধাক্কা মেরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে।

গত ১২ জুন আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি। কিন্তু ওড়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ভবনের উপরে ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। গত মাসে, অসামরিক বিমান পরিবহণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরলীধর মোহন জানিয়েছিলেন, তদন্তের সময়ে অন্তর্ঘাত-সহ দুর্ঘটনার সম্ভাব্য সকল কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এরপর এক ১৫ পাতার রিপোর্টে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পেছনে পাখির ধাক্কা কিংবা অন্তর্ঘাত নেই। এমনকি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার তত্ত্বও একপ্রকার নস্যাৎ করে দেয় তদন্তকারী সংস্থা।

কিন্তু তারপরেও কীভাবে আচমকা বিমানের দুই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বড় প্রশ্ন। রিপোর্টে জানানো হয়, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে, বিমানের দুই ইঞ্জিন একসঙ্গে ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে যায়। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে বিমানটি পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ গতিবেগে। এর পরপরই বন্ধ হয়ে যায় দুটি ইঞ্জিন। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে ককপিটে দুই পাইলটের কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে ব্ল্যাক বক্সে। একজন বলেন, ‘ইঞ্জিন বন্ধ করলে কেন?’ অপরজন উত্তর দেন, ‘আমি কিছু বন্ধ করিনি’। জানা গিয়েছে, ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে ব়্যাম এয়ার টার্বাইন চালু করা হয়েছিল, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ জোগান দেওয়া যায়। কিন্তু তাও যথেষ্ট কাজে আসেনি। জ্বালানির পরিমাণ পর্যাপ্ত ছিল, এবং সরবরাহেও কোনও সমস্যা ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ।