আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারাদিনের কাজের শেষে ঘুম আমাদের কাছে শান্তি ও বিশ্রামের সমার্থক। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান জানাচ্ছে, এই আরামের ঘুমের আড়ালেই লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক বিপদ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিনের অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় ঘুমের মধ্যে, বিশেষত ভোরের দিকে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। প্রশ্ন হল, যখন শরীর বিশ্রামে নেয়, তখন হৃৎপিণ্ড কী এমন করে যাতে শরীর এতটা ঝুঁকির মুখে পড়ে? এর নেপথ্যে রয়েছে আমাদের শরীরের নিজস্ব ঘড়ি এবং ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটে যাওয়া কিছু জটিল জৈবিক প্রক্রিয়া।
শরীরের নিজস্ব ঘড়ি ও হরমোনের খেলা: আমাদের শরীর একটি প্রাকৃতিক ২৪ ঘণ্টার ছন্দে চলে, যাকে ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বলা হয়। এই ছন্দই আমাদের ঘুম এবং জাগরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুমের প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয়, রক্তচাপ কমে এবং হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে আসে। শরীর আক্ষরিক অর্থেই বিশ্রামে চলে যায়।
কিন্তু বিপত্তি বাধে ঘুমের শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ভোরের দিকে। ঘুম থেকে ওঠার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে মস্তিষ্ক অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো ‘স্ট্রেস হরমোন’ ক্ষরণ শুরু করে। এই হরমোনগুলি হঠাৎ করে রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে, রক্ত কিছুটা ঘন হয়ে যায়। যাঁদের ধমনীতে আগে থেকেই কোলেস্টেরলের আস্তরণ বা ‘ব্লকেজ’ রয়েছে, তাঁদের জন্য এই আকস্মিক পরিবর্তন মারাত্মক হতে পারে। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ফলে ধমনীর গায়ে থাকা কোলেস্টেরলের আস্তরণ ফেটে যেতে পারে এবং সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে।
স্বপ্ন দেখাও বিপজ্জনক হতে পারে: ঘুমের মধ্যে একটি বিশেষ পর্যায় হলো ‘রেম স্লিপ’। এই পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। যখন আমরা স্বপ্ন দেখি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের অজান্তেই প্রায় জেগে থাকার মতোই সক্রিয় হয়ে ওঠে। অথচ আমাদের শরীর কিন্তু শিথিল থাকে। ফলে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অত্যন্ত খামখেয়ালি আচরণ করে, আকস্মিক ভাবে ওঠানামা করে। এই অনিয়ন্ত্রিত ওঠানামা দুর্বল হৃৎপিণ্ডের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রেম স্লিপের সময়ই হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক আচরণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
স্লিপ অ্যাপনিয়া: ঘুমের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস বারংবার আচমকা বন্ধ হয়ে যায় এবং আবার চালু হয়। প্রতিবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার সময় রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক শরীরকে জাগিয়ে তোলার জন্য বিপুল পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে, যার জেরে রক্তচাপ আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়াটি রাতে বহুবার ঘটতে থাকলে তা হৃৎপিণ্ডের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। প্রখ্যাত সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী এই রোগেই মারা যান।
সুতরাং, ঘুম মানে শুধুই বিশ্রাম নয়, এটি শরীরের এক অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। অনিয়মিত জীবনশৈলী, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ঘুমের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
