রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI) ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। এখন বাজারের পালা—সংযম ও পরিপক্বতা দেখানোর এবং অযথা উচ্ছ্বাসে না ভেসে যাওয়ার। এসবিআই রিসার্চ তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন এক সময়ে আরবিআই রেপো রেট কমিয়েছে, যখন দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি—দু’টিই অনুকূল অবস্থানে রয়েছে, যা সত্যিই এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
2
11
আরবিআইয়ের মোনিটারি পলিসি কমিটি (MPC) সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বের অনিশ্চয়তা ও অস্থির আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তার নীতিগত অবস্থান ‘নিরপেক্ষ’ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে।
3
11
এসবিআই রিসার্চের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি ৮.২ শতাংশের বেশি এবং অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে মাত্র ০.২৫ শতাংশে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে তারা “অসাধারণ” বা “এক্সসেপশনাল” বলেই বর্ণনা করেছে।
4
11
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়—যুক্তরাজ্য, চিন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে, যেখানে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সময় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়েছে। তবে, যেসব উদাহরণ রয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুদের হার অত্যন্ত উচ্চ স্তরে ছিল এবং মূল্যস্ফীতিও তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।
5
11
উদাহরণ হিসেবে, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকের ব্রিটেনের কথা উল্লেখ করেছে এসবিআই রিসার্চ। তৎকালীন চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকার অ্যান্থনি বার্বার ‘ড্যাশ ফর গ্রোথ’ নীতির অধীনে সুদের হার কমিয়েছিলেন, যদিও তখন দেশের মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ১২.৫ শতাংশ।
6
11
একইভাবে, ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে এশীয় আর্থিক সংকটের আগে ইন্দোনেশিয়া ধারাবাহিকভাবে সুদের হার কমিয়েছিল। সেই সময় দেশটির বৃদ্ধি ছিল ৮.৬ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৭.৪ শতাংশ।
7
11
এসবিআই রিসার্চ জানিয়েছে, এই প্রসঙ্গে চিন একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে ২০১২ ও ২০১৫ সালে সুদের হার কমানো হয়, যখন গড় মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ১.৮ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭.৪ শতাংশ।
8
11
মূল্যস্ফীতির দিক থেকে ভারতের পরিস্থিতিও বেশ স্বস্তিদায়ক। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমছে, খরিফ উৎপাদন ভালো হয়েছে, রবি মরশুমের বপন পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি, জলাধারগুলিতে পর্যাপ্ত জলস্তর এবং অনুকূল মাটির আর্দ্রতা মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সাহায্য করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
9
11
আরবিআই ২০২৫–২৬ অর্থবর্ষের বাস্তব জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৭.৩ শতাংশ করেছে। এছাড়া, ২০২৬–২৭ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.৮ শতাংশ হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে।
10
11
তবে এসবিআই রিসার্চ সতর্ক করে দিয়েছে যে, চলতি শুল্ক ও বাণিজ্য নীতিগত অনিশ্চয়তা পণ্য ও পরিষেবার বৈদেশিক চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি, দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতা ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
11
11
এদিকে, আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে একটি “রেয়ার গোল্ডিলকস পিরিয়ড” বলে অভিহিত করেছেন—যেখানে একদিকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, অন্যদিকে অত্যন্ত কম মূল্যস্ফীতি একসঙ্গে বিদ্যমান। তিনি বলেন, “অর্থনীতি শক্তিশালী বৃদ্ধি এবং সহনশীল মূল্যস্ফীতির সাক্ষী। আমরা নতুন বছরে আশা, উদ্যম ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি, যাতে অর্থনীতিকে আরও সমর্থন করা যায় এবং অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।”