বেতন অ্যাকাউন্টে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই অদৃশ্য হয়ে গেল, বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যার সম্মুখীন। প্রতিদিনের খরচ, বিল, ইএমআই, ভাড়া, কেনাকাটা, বাইরে খাওয়া এবং অনেক ছোটখাটো খরচ একত্রিত হয়ে পুরো আয়ই শেষ হয়ে যায়। সঞ্চয়ের জন্য হাতে আর টাকা থাকে না। কিন্তু, কয়েকটি আর্থিক অভ্যাস মেনে চললেই টাকা জমানো সম্ভব। আপনি যদি আপনার বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ করেন, তাহলে আপনি কোনও অতিরিক্ত আয় ছাড়াই প্রতি মাসে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন।
2
8
বেশিরভাগ মানুষ মাস শেষে সঞ্চয় করার কথা ভাবেন, কিন্তু বাস্তবতা হল- হাতে টাকা থাকে না। অতএব, সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল আপনার বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি সঞ্চয়ে স্থানান্তর করা। সাধারণত, আপনার আয়ের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ একটি এসআইপি, আরডি, অথবা সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বেতন ৫০,০০০ টাকা হয়, তাহলে শুরুতেই কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা আলাদা করে রাখলে ধীরে ধীরে ছোট সঞ্চয়গুলি একটি বড় তহবিলে পরিণত হয়।
3
8
মাসের শুরুতে ইএমআই এবং প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ করুন: ভাড়া, গৃহঋণের কিস্তি, ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি, বিদ্যুৎ ও জলের বিল, বাচ্চাদের স্কুল ফি এবং মোবাইল রিচার্জের মতো প্রয়োজনীয় খরচ কোনও অবস্থাতেই এড়ানো যায় না। সময়মতো পরিশোধ করলে দু'টি সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত, এটি মানসিক শান্তি প্রদান করে কারণ প্রয়োজনীয় দায়িত্বগুলি সম্পন্ন হয় এবং দ্বিতীয়ত, এটি আপনাকে বিলম্বিত ফি থেকে বাঁচায়। যখন মাসের শুরুতে প্রধান ব্যয়গুলি করা হয়, তখন মাসের বাকি সময় আপনার ব্যয়ের উপর আপনার আরও ভাল নিয়ন্ত্রণ থাকে।
4
8
আপনার মাসিক পারিবারিক বাজেট আগে থেকে পরিকল্পনা করুন: প্রায়শই, ছোট খরচ বাজেটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। শাকসবজি, দুধ, পেট্রোল, ক্যাব, অনলাইন অর্ডার এবং তাড়াহুড়ো করে কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতএব, বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো মাসের জন্য আপনার পরিবারের খরচ অনুমান করা উপকারী। মুদিখানা, ভ্রমণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আলাদা করে রাখলে আপনি অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারবেন এবং মাসের শেষ নাগাদ অর্থ ফুরিয়ে যাওয়া রোধ করতে পারবেন।
5
8
আপনার খরচকে তিনটি বিভাগে ভাগ করে বুদ্ধিমানের সাথে ব্যয় করুন: ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হলেই অর্থ সাশ্রয় হয়। এর জন্য, আপনার সম্পূর্ণ আয়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ। চাহিদা যেমন- ভাড়া, খাবার, ইএমআই এবং ভ্রমণ, বাইরে খাওয়া, ভ্রমণ, সিনেমা এবং কেনাকাটা এবং সঞ্চয় (যার মধ্যে এসআইপি, আরডি বা এফডি এর মতো স্কিম অন্তর্ভুক্ত)। আপনি যদি প্রতি মাসে আপনার চাহিদার উপর ব্যয় মাত্র ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা কমিয়ে দেন, তাহলে আপনি বছরে অতিরিক্ত ৭০০০০ থেকে ৮০০০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন।
6
8
মাসের প্রথম সপ্তাহকে "ব্যয়-মুক্ত" সপ্তাহ করুন: বেশিরভাগ মানুষ মাসের শুরুতেই সবচেয়ে বেশি খরচ করে কারণ তখনই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে। যদি আপনি প্রথম ৭ দিন শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খরচের জন্য খরচ করেন এবং বাইরে খাওয়া, অনলাইন কেনাকাটা বা বিনোদনের খরচ এড়িয়ে চলেন, তাহলে আপনি সহজেই ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়।
7
8
প্রতি মাসে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা সাশ্রয় করার পদ্ধতি: যদি উপরোক্ত পাঁচটি অভ্যাস ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা হয়, তাহলে প্রতি মাসে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ সাশ্রয় করা সহজ হয়। একটি এসআইপি বা আরডি-তে ১০,০০০ টাকার মতো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ করা, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো, "ব্যয়-মুক্ত" সপ্তাহে বিনিয়োগ করা এবং সময়মতো বিল পরিশোধ করা (যা লেট ফি-তেও সাশ্রয় করে) উল্লেখযোগ্য সাশ্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি প্রতি মাসে বড় সাশ্রয় তৈরি করে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতার স্পষ্ট উন্নতি দৃশ্যমান হবে।
8
8
সঠিক সিদ্ধান্ত দ্রুত আপনার আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে। প্রতি মাসে অর্থ সঞ্চয় করা কঠিন নয়, বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে কেবল কয়েকটি বুদ্ধিমান পদক্ষেপ করতে হবে। সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়ানো আপনার আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করবে। আজ থেকে শুরু করে এই পাঁচটি নিয়ম মেনে চললে, কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার অর্থ ব্যবস্থাপনার জীবন উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হতে পারে।