টলিউডের মুকুটহীন রানি তিনি। পঞ্চাশের গণ্ডি পেরিয়েও এখনও নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন সমানতালে। কারণ বয়স শুধুই একটা সংখ্যা তা বারে বারে প্রমাণ করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। দুই বাংলায় তাঁর জনপ্রিয়তা অটুট। বলিউডেও তাঁর পরিচিতি কম নেই। জন্মদিনেও কাজ করাতে বিশ্বাসী তিনি। পাশাপাশি ছোট্ট করে হয়ত ঘরোয়াভাবে একটু উদযাপন। কাছের মানুষদের শুভেচ্ছা আর ভালবাসাতে ডুবে থাকতে এইটুকুইতেই খুশি অভিনেত্রী।
ঋতুপর্ণার জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে খোলা চিঠি লিখলেন অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী। সেই চিঠিতে যেমন ফুটে উঠল ‘জুনিয়র’-এর প্রতি ‘সিনিয়র’-এর স্নেহ এবং শ্রদ্ধা, পাশাপাশি জানা গেল অভিনেত্রী সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য। এক কথায়, এই চিঠিতে শুধু তারকা নয় পর্দার ওপারে মানুষ ঋতুপর্ণাকেও তাঁর অনুরাগীদের সামনে নতুনভাবে পেশ করলেন অর্জুন। জানালেন, নিজের পেশাগত জীবনের নানান সমস্যা পেরিয়ে নিজেকে এত বছর টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বহু বিরোধিতা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা যেমন সামলেছেন তেমন একা হাতে সামলেছেন নিজের সংসার। অর্জুন আরও জানিয়েছেন, কূটকচালি করে সময় নষ্ট করা যা বাঙালিদের সবচাইতে প্রিয় কাজ তা থেকেও শতহস্ত দূরে থাকেন ‘বার্থডে গার্ল’।
সমাজমাধ্যমে অর্জুন চক্রবর্তী লিখলেন,
“এই মেয়েটিকে আমি বহু বছর ধরে চিনি, চিনি বললে ভুল হবে, জানি।
প্রায় ৩৫ বছর!
ওর প্রথম বড় পর্দায় পদার্পণ আমার সাথে (৭২ দিন পর, ছবির নাম), দুর্ভাগ্যবশত রিলিজ হয়নি।
তারপর থেকে ওর আমার পূর্নদাশ রোডের বাড়িতে আসা যাওয়া।
আমার মেয়ের তখন একবছর বয়স, ও এখনো আমার মেয়েকে ডাক নাম ধরে ডাকে।
নীলাঞ্জনা ওকে ভীষন ভালবাসে।
আমার ও খুব খুব প্রিয়।
একটা কথা বলি বলি করে বলা হয়নি।
যদিও ও আমার অনেক পরে আমাদের পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আমার থেকে বয়সে ছোট, আমার জুনিয়র, তবু বলতে কোন দ্বিধা নেই যে ওর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।
আমি আজ পর্যন্ত ওকে কারুর ওপর রাগতে দেখি নি, কারুর সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলতে বা পর নিন্দা অথবা কুটকাচালি করে সময় নষ্ট(যা বাঙালী দের সব চাইতে প্রিয়) করতে দেখিনি।
অত্যন্ত চাপ বা টেনশড পরিস্থিতি র মাঝেও ওকে ঘাবড়াতে বা ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি।
দেখা হলেই ওকে আমি জিজ্ঞেস করি!
“হ্যাঁরে কিছু টিপস দে না,কী করে পারিস!”
ও নিজের পেশাগত জীবনের সমস্যা, নিজেকে এত বছর ধরে ধরে রাখা, এত বিরোধিতা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, আবার নিজের সন্তান স্বামী সংসার সামলানো!
এক লহমার জন্য ও ওকে নিভে যেতে দেখিনি।

আমরা দুজনে পরবর্তী কালে বেশ কয়েকটি ছবিতে এক সাথে কাজ করেছি।
এত ভালো মনের সহকর্মী কোনদিন পাইনি বললে ভুল বলা হবে (আমি সৌভাগ্যবশত চিরকাল ই সবার প্রিয়), কিন্তু ও একটু আলাদা।
আমি ওকে লক্ষ্য করি যখন ও আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে, নীলাঞ্জনার সাথে নিজের সুখ দুঃখের কথা বলে, আমায় কতটা সম্মান করে এবং তার মধ্যে কোন ভেজাল বা কারসাজি নেই!
ওর মা বাবা আজ এই পৃথিবীতে নেই, ওঁরা আমায় ভীষণ ভালবাসতেন।
ওর স্বামী সঞ্জয় (চক্রবর্তী) কে আমার বেশ লাগে।
নিজের বিদ্যা বুদ্ধির জোরে ও নিজের যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এবার বলি;
“আজ তোর জন্মদিন, সুস্থ থাকিস, যেরম আছিস ঠিক সেইরম থাকবি বদলাস না।
অবশ্য কারুর কথায় যে তুই কান দিস না, আমি জানি! এই ছবিটা দেয়ার একটা কারন আছে। এখানে আমি বলছি আর তুই শুনছিস। আমি বলছি যে আমার এখনো মনে পড়ে ধিরে ধিরে উত্থান ও নানা জীবনের জটিলতা পেরোনো একটি মেয়ের একা লড়ে যাওয়ার কথা।
তোর এই যুদ্ধকে আমি কুর্নিশ জানাই।
শুভ জন্মদিন রে।
অর্জুন দা”
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল।)
শেষে অভিনেতার বার্তা যেন বন্ধুর মতোই উষ্ণ -“আজ তোর জন্মদিন, সুস্থ থাকিস, যেমন আছিস তেমনই থাকবি। বদলাস না। তোর এই লড়াইকে আমি কুর্নিশ জানাই।”
এই চিঠি যেন ঋতুপর্ণাকে শুধু অভিনেত্রী নয়, এক অনমনীয়া নারীযোদ্ধা হিসেবেও নতুনভাবে চেনাল সকলকে।
