২৪ জুলাই, ১৯৮০। প্রয়াত হয়েছিলেন উত্তমকুমার। এরপর কেটে গিয়েছে ৪৫ বছর। আজও বাঙালি ছবিপ্রেমী দর্শকের হৃদয়ে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করেন উত্তম। 
কলকাতার লেনিন সরণিতে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-সবুজ রঙে মোড়া সেই প্রাচীন দালান— ‘শিল্পী সংসদ’, ১৯৬৮ সালে মহানায়ক উত্তমকুমার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টলিউডের অসহায় কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আজ, তাঁর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে, সেই স্মৃতিবহ ভবন ধ্বংসের মুখে! ভবনের গায়ে কলকাতা পুরসভার কড়া সতর্কীকরণ— “বিপজ্জনক বাড়ি”।

 

আরও পড়ুন: ‘কাস্টিং কাউচ’ থেকে ভয়ঙ্কর নেপোটিজম! বলিউডের গোপন সত্যি টেনে হিঁচড়ে খুললেন বাণী কাপুর!

তবু এই ভাঙাচোরা গড়নের ভিতর লুকিয়ে আছে ইতিহাস, শিল্প, সংগ্রাম আর এক মন ভাল করা এক সুগন্ধি স্মৃতি। শিল্পী সংসদের একসময়ের কনিষ্ঠ সদস্য সাধন বাগচী বলেন, “ভবনটা বাইরে থেকে যেমন পুরনো আর জীর্ণ, ভিতরে একেবারেই অন্যরকম অনুভূতি দেয়।” ভিতরে ঢুকলেই, লাল সিঁড়ি পেরিয়ে একতলার ঘর, দেয়ালে টাঙানো বাংলা সিনেমার কিংবদন্তিদের ছবি, ট্রফিতে ভরা আলমারি, আর এক কোণে রাখা সেই হারমোনিয়াম— যেটা উত্তম নিজে বাজাতেন।

 

আরও পড়ুন: ফিরে এল ‘রক্তবীজ’, শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘রক্তবীজ ২’-এর প্রথম ঝলকেই আতঙ্ক, অ্যাকশন আর ষড়যন্ত্রে জমজমাট!

শুধু স্মৃতিমেদুরতা নয়, এই ভবন এক সময় 'টলিউডের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' হিসেবেও কাজ করেছে। ‘অভিনেত্রী সংঘ’ থেকে বেরিয়ে এসে উত্তমকুমার যখন শিল্পী সংসদ গড়েন, তখন তাঁর লক্ষ্য ছিল শিল্পীদের সংগঠিত সাহায্যের বন্দোবস্ত। এই ভবনে বসেই তৈরি হয়েছিল মঞ্চনাটক ‘আলিবাবা’র পরিকল্পনা— যেটি ছিল উত্তমকুমারের মঞ্চ অভিষেক, পুরোপুরি ফান্ড রেইজিং-এর উদ্দেশ্যে।সাধন বলেন, “তখন এই ভবনের ঘরে সাদা চাদর পেতে ২৫ জন সদস্য একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা করতেন। দেখলে মনে হতো যেন কংগ্রেস অধিবেশন চলছে!”

 

আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: ‘ভোর পাঁচটা থেকে এনএসডি-র বাইরে পরিচালক পাকড়াও করতে দাঁড়াত...’ রতন থিয়ামের প্রয়াণে রুদ্রপ্রসাদ, বিভাস ও সোহিনী হাতড়ালেন অগাধ স্মৃতির ঝাঁপি

 

‘স্টারডম নয়, সংগ্রামী শিল্পীর মন’— এই ভবন তাই শুধুই ইঁট-কাঠের গাঁথনি নয়, বরং এক সামাজিক দায়বদ্ধতার স্মারক।
উত্তমকুমার নিজে বারবার এই ভবনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন, একজন তারকা তাঁর খ্যাতিকে কীভাবে সহকর্মীদের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেন।

 

আজ সেই ভবন ধ্বংসের মুখে। অথচ এটিই তো হতে পারত বাংলা সিনেমার একটা জীবন্ত সংগ্রহশালা।লেখক ও অধ্যাপক সায়নদেব চৌধুরীর কথায়, “এই ভবন শুধু উত্তমকুমারের স্মৃতিধন্য নয়, বরং তাঁর শিল্প-দায়বদ্ধতার প্রতীক। হেরিটেজ তকমা না দিলে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রতি অবিচার হবে।”

 

এবার তাই দাবি উঠেছে—
 শিল্পী সংসদ ভবনকে অবিলম্বে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক!
 নন্দনে ১০ দিনের উত্তম রেট্রোস্পেকটিভ আয়োজন করুক সরকার!

 

স্মৃতির সঙ্গে সম্মান জড়িত। আর উত্তমকুমার? তিনি তো বাংলা চলচ্চিত্রের গর্ব, উত্তরাধিকার!