স্রেফ একটা অনুষ্ঠান তাঁদের মধ্যে কয়েক রাজ্যের দূরত্ব বাড়িয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষকে ‘নকল’ করেছিলেন জনপ্রিয় সঞ্চালক মীর আফসার আলি। তাতে মনে মনে ধাক্কা খেয়েছিলেন প্রয়াত পরিচালক। বলেছিলেন, “মীর আদতে তাঁর মতো বিশেষ আত্মপরিচয়ের মানুষদের ব্যঙ্গ করেছেন। সেই নিয়ে নাকি দু'টি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল বাংলা বিনোদন জগৎ! এর পরে একটি চ্যানেলে টক শো সঞ্চালনা করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। নাম ছিল, ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’। সেখানে তিনি মীরের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলেছিলেন, ভাল লাগেনি অভিনেতা-সঞ্চালকের। পরিচালকের যুক্তি ছিল, তিনি যেহেতু বিশেষ শ্রেণিভুক্ত তাই মীরের এই ধরনের অনুষ্ঠানে ওই বিশেষ শ্রেণির মানুষেরা আহত হতে পারেন। ঋতুপর্ণ তাই অনুরোধ জানিয়েছিলেন, আগামী দিনে মীর আবারও তাঁর নকল করলে যেন পরিচালকের নাম উল্লেখ করে দেন। তিনি কিচ্ছু মনে করবেন না।সেই সম্প্রচারিত পর্ব দেখে চোখ কপালে উঠেছিল দর্শকের। নড়চড়ে বসেছিল গোটা টলিপাড়া। তবে একটা সময়ের পর এই দুই শিল্পীর মধ্যে থাকা সেই দূরত্বও মুছে গিয়েছিল। সেই অভিমান নিজেই মুছে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। সেকথা জানিয়েছিলেন মীর। রবিবার, পরিচালকের জন্মবার্ষিকীতে সেই স্মৃতি ফের সজীব মীরের ফেসবুক বয়ানে।

ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে নিজের একটি হাসি মুখের ছবি পোস্ট করে মীর লিখেছেন -
“আজও! আজও অনেকে আছেন যাঁরা ভাবেন আমাদের বুঝি মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই ২০১১ সালে, ঘোষ & Co.-র পর থেকে।
আমরা নাকি sworn enemies ছিলাম। একে অপরকে নাকি সহ্য করতে পারতাম না।
আমি কিন্তু আজও মানুষটির Jabra Fan।
আজ তাঁর জন্মদিন। তাই খুব স্বাভাবিক নিয়মে এই পোস্ট।
And by the way, he’s still my favourite ‘phenomena of discussion’ on various platforms...
বোধ হয় কোথাও ওনার ওই হাসি মুখে মিথ্যে রাগ ঝুলিয়ে “এক মারবো শয়তান!!” বলা’টা শোনার লোভে..”\
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল)

আরও পড়ুন: তুমুল বিতর্কে ‘নো এন্ট্রি’র সিক্যুয়েল! দিলজিৎ দোসাঞ্জ কি সত্যিই বাধ্য হয়ে এই ছবি ছাড়ছেন?
এক সাক্ষাৎকারে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে অভিমানের পালা চুকোনোর ঘটনা প্রসঙ্গে মীর বলেছিলেন, ‘‘জি বাংলা কর্তৃপক্ষ ‘মীরাক্কেল’-এ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ঋতুদাকে। শুটিংয়ের আগে আমি ওঁর সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করতে গিয়েছিলাম। রূপটান ঘরে ঋতুদা তখন একা। দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকার অনুমতি চাইতেই ভীষণ আন্তরিক গলায় বলেছিলেন, ‘আয়!’ ওই একটা ডাক সব পুরনো কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ঋতু-স্মরণ শীর্ষক একটি ভিডিও রেকর্ডিং করেছিলেন মীর। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘সুযোগ পেলে আবারও আমি নকল করব ঋতুপর্ণ ঘোষকে।’’ তাঁর ঋতুদা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আনকোরাদের সঙ্গেও অনায়াসে মিশে যেতে পারতেন ঋতুপর্ণ। তাঁর বাড়িতে তারকাদের আনাগোনা কম ছিল না। তার মধ্যেও নতুন শিল্পী-অভিনেতাদের জন্য তাঁর বাড়ির দরজা খোলা থাকত।’’ মীর আরও জানিয়েছেন, প্রতি ছবিতেই ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতেন বলে তাঁকে শুনতে হত, তিনি নাকি সত্যজিৎ রায়কে টোকেন! এই কথারও মজার উত্তর দিয়েছিলেন পরিচালক। বলেছিলেন, ‘‘ছেলেকে বাবার মতোই দেখতে হয়।’’ কিংবদন্তি পরিচালককে অনুসরণের কথা সে সময় এ ভাবেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ।
