ফের শিরোনামে বিতর্কিত দক্ষিণী অভিনেতা শিবাজি। স্পষ্টভাষী স্বভাব আর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য যিনি আগেও বহুবার আলোচনায় এসেছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। নিজের নতুন ছবি ধনডোরা–র এক প্রচার অনুষ্ঠানে এসে নায়িকাদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করেই নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে তিনি। সেই মঞ্চেই তিনি বলেন, অভিনেত্রীদের উচিত নয় অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরা। বরং শাড়ি বা সম্পূর্ণ ঢাকা পোষাকেই তাদের বেশি মানায়। তাঁর বক্তব্য, “সৌন্দর্য্য শরীর দেখানোর মধ্যে থাকে না। তা থাকে পুরো পোশাকের মধ্যেই আসল মর্যাদা থাকে।”
শিবাজির দাবি, অনেকে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, মনে মনে এই ধরনের পোশাক পছন্দ করেন না। তাঁর কথায়, স্বাধীনতা মূল্যবান, তবে তারও সীমা আছে। তিনি নারীদের প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মর্যাদা আর সম্মান সৌন্দর্যের সঙ্গে থাকা উচিত। উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন অভিনেত্রী সাবিত্রী, সৌন্দর্য্যা এবং সমসাময়িক তারকা রশ্মিকা মন্দানাকে, যাদের পোশাকের রুচি তিনি “রুচিসম্মত” বলে উল্লেখ করেন।
স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই মন্তব্যেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই মেরুর প্রতিক্রিয়া। একদল মনে করেন, তিনি কেবলই সংস্কৃতি আর শালীনতার কথা বলেছেন; অন্যদিকে অনেকেই এটিকে সরাসরি ‘নীতিপুলিশি’ বলে আক্রমণ করেছেন।
প্রতিক্রিয়া আসে সেলেব দুনিয়া থেকেও। দক্ষিণী গায়িকা ও সমাজকর্মী চিন্ময়ী শ্রীপদা কড়া ভাষায় বলেন, এই ধরনের মন্তব্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং পেশাদার মঞ্চের জন্য অনুপযুক্ত। তাঁর প্রশ্ন, কেন বারবার নারীদেরই পোশাক নিয়ে উপদেশ দেওয়া হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন কথা কি শোনা যায়? অভিনেত্রী-উপস্থাপিকা অনসূয়া ভরদ্বাজও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জানান—“এটা আমার শরীর, তোমার নয়” যা একপ্রকার স্পষ্ট জবাব বলেই ধরে নিচ্ছেন নেটিজেনরা।
এমন বিতর্ক শিবাজির জন্য নতুন নয়। কেরিয়ারের শুরুতে বাণিজ্যিক ছবিতে জনপ্রিয় হলেও পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করেন। বিগ বস তেলুগু ৭-এ অংশগ্রহণের পর তাঁর স্পষ্টভাষী চরিত্র আরও সামনে আসে। পাশাপাশি কোর্ট: স্টেট ভার্সেস আ নোবডি এবং ৯০জ–এর মতো কাজ দিয়ে অভিনেতা হিসেবে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়, এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু আসলে কী? শালীনতার বার্তা নাকি নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ? পোশাক কি সত্যিই সংস্কৃতির পরিমাপক না কি ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়? সামাজিক মাধ্যমে এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ সংস্কৃতির নামে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করছেন, কেউ আবার মনে করছেন কে কী পরবেন, তা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তির নিজের সিদ্ধান্তই হওয়া উচিত।
সব মিলিয়ে, শিবাজির কয়েক মিনিটের বক্তব্য আবারও টলেনি ইন্ডাস্ট্রিতে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিতর্কের উত্তাপ এখনও ঠান্ডা হয়নি। তাই প্রশ্নটা আপাতত খোলা রেখেই বলা যায়, এই বিতর্ক আরও কিছুদিন ধরে চলবেই।
