সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও দুপুর পর্যন্ত জল নামেনি। অলিগলি তো বটেই, কলকাতার বড় বড় রাস্তাও জলের তলায়। কোথাও কোমর, আবার কোথাও হাঁটুসমান জল। মঙ্গলবার সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কলকাতার মানুষ। 

 

কলকাতায় গত কয়েকঘণ্টার টানা বৃষ্টি আর তার পরিণাম এককথায় শিউরে ওঠার মতো। মঙ্গলবার সকালের শহর দেখেই শিউরে উঠছেন বাসিন্দারা। জলমগ্ন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জীবন। সকাল থেকেই জমা জল দেখেই বাড়ছিল উদ্বেগ। বেলা বাড়তেই সেই উদ্বেগ, আশঙ্কা সত্যি হয়ে সামনে এসেছে। চারদিকে জলমগ্ন পরিস্থিতি। ভয়াবহতা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। রেল স্টেশন এলাকায় মেট্রো স্টেশনে জল জমে, রাস্তায় গাড়ি অর্ধমগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। জলের স্রোত বেড়ে চলেছে। এর মাঝে শোচনীয় অবস্থা কলকাতার কুমোরটুলিতেও। জল ঢুকে ভেসে যাচ্ছে প্রতিমা। পুজো প্যান্ডেলগুলোর অবস্থাও একইরকম। এর মাঝেই চলছে জনজীবন, থেমে নেই এক মুহূর্তও। তবে গোটা কলকাতা ডুবে রয়েছে একবুক জলে। কোথাও বাইক-গাড়ি ডুবুডুবু তো কোথাও জলের তোড়ে মণ্ডপ ভেসেছে। টলিপাড়ার পরিচিত ব্যাক্তিত্বদের ঘরবাড়িও রেহাই পায়নি। সেসবের ছবি, ভিডিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই বন্যাসম ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক যেমন করেছেন, তেমনই কেউ কেউ এই পরিস্থিতিতেও রসবোধ হারাননি। ঠাট্টার মাধ্যমে আশা জুগিয়েছেন, সব ঠিক হয়ে যাওয়ার

 

শ্রীনন্দা শঙ্কর একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে দেখিয়েছেন, তাঁর আবাসনের উঠোন চত্বরে প্রায় এক বুক জল। দাঁড় করানো একাধিক গাড়ির অর্ধেক ডুবে রয়েছে জল। নীচের প্যান্ডেলের বাঁশ পর্যন্ত ভেসে যাচ্ছে জলের তোড়ে। এরপর ভিডিওতে দেখা গেল, তাঁর বাড়ির পরিচারকদের হাল-হকিকৎ খোঁজ খবর করতে করতে তিনি দেখালেন তাঁদের বাড়ির নাচের অনুশীলনের ঘরেও ঢুক পড়েছে জল! এবং রীতিমতো ভাসছে সবকিছু!

 

 

শিল্পী জানালেন, তাঁর আজকেই বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা, সুতরাং মালপত্র গুছানো থাকলেও তা এইমুহুর্তে স্থানান্তরিত করতে হবে নইলে তা ভিজে, ভেসে যেতে পারে! এর পাশাপাশি গত রাত থেকে তাঁর বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ পরিষেবাও। একইসঙ্গে অবশ্য সাধারণ মানুষদের যথাসম্ভব সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন শিল্পী।

 

মীর একটি ছোট্ট রিল পোস্ট করেছেন, তাঁর বাড়ির বারান্দা থেকে। নীচে দেখা যাচ্ছে ডুবে রয়েছে গলিপথ, একাধিক গাড়ি। বলাই বাহুল্য, জনশূন্য সেই জলমগ্ন রাস্তা। সেই রীলের মধ্যে স্পষ্ট মীরের রসিকতার ছাপ। অমিতাভ বচ্চন -জিনত আমন অভিনীত জনপ্রিয় ছবি 'দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার' ছবির বিখ্যাত গান 'দো লফজোঁ কি ইয়ে...' গান!

 

 

পিছিয়ে নেই রাণা সরকারও। নিজের বাড়ি অথবা অফিসের সিঁড়ির একটি ছোট্ট রিল পোস্ট করেছেন সমাজমাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টির জল ঝরনার মতো তীব্রবেগে‌ পড়েই চলেছে। দৃশ্যর সঙ্গে অদ্ভুত মিল 'টাইটানিক' ছবির একটি দৃশ্যের - যখন জাহাজটি ডুবছিল, তার খোলের মধ্যে নীচের তলায় সমুদ্রের জল যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুবিয়ে দিচ্ছিল সবকিছু। রিলের সঙ্গে অবশ্য রাণা লিখেছেন, " এইমুহুর্তে কলকাতার সবথেকে সুন্দর সাউণ্ড স্টুডিও এটাই!" 

 

তবে বৃষ্টি থেমে গেলেও, শহরের দুর্দশা এখন তুঙ্গে। 

গোটা কলকাতায় জল জমার ফলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কোনও কোনও রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি স্তব্ধ, আবার কোথাও কোথাও ধীরে চলছে যানবাহন। কলকাতার নিচু এলাকার অনেক বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। কোথাও কোথাও খাবার জলের অভাবও প্রকট। প্রয়োজনে বেরিয়ে রাস্তায় নানান দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। সব মিলিয়ে কলকাতা যেন এখন দুর্যোগের ডায়েরির পাতা।