বয়সের সঙ্গে শরীর বদলায়, বদলায় চেহারার গঠনও। কিন্তু এই স্বাভাবিক পরিবর্তনকেই কটাক্ষে পরিণত করতে অনেকেরই দেরি হয় না আর সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সম্প্রতি গিয়েছেন অভিনেত্রী তমন্না ভাটিয়া। ‘বাহুবলী’ ছবি খ্যাত এই তারকা-অভিনেত্রী গত কিছুদিন ধরে তাঁর শারীরিক রূপান্তর নিয়ে খবরের শিরোনামে। কেউ বলছেন, তামান্না নাকি ওজন কমাতে ‘ওজেম্পিক’ ওষুধের সাহায্য নিয়েছেন, কেউ আবার তাঁর নতুন লুকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

 

সম্প্রতি, দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সমস্ত জল্পনা-সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তমন্না। খোলামেলা ভাষায় তিনি বলেছেন, “আমি পনেরো বছর বয়স থেকে ক্যামেরার সামনে। দর্শকরা আমাকে বড় হতে দেখেছেন, তাই কিছুই লুকোনোর নেই। কুড়ির কোঠায় যতদিন পর্যন্ত বয়স ছিল, ততদিন শরীরের গঠন সবসময়ই স্লিম ছিল, সেটাই আমার ন্যাচারাল বডি টাইপ। এই চেহারা আমার কাছে নতুন কিছু নয়।”

 

তবে কোভিডের সময় পরিস্থিতি বদলেছিল বলে জানান অভিনেত্রী। সেই সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। “কোভিডের সময় শরীরটা খুব খারাপভাবে রিঅ্যাক্ট করেছিল। আমি খেতে ভালবাসি- ভাত, রুটি, ডাল। ফলে আগের মতো ওজন রাখা মুশকিল হচ্ছিল,” বলেন তামান্না।

 

তবে ওজন বা আকৃতি নয়, তাঁর কাছে সবচেয়ে জরুরি আত্মবিশ্বাস। তামান্নার ভাষায়, “একটা সময় বুঝতে পারি, আমি যেন নিজের শরীরকে নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, ‘আমার টামি বাইরে বেরিয়ে আছে নাকি?’ তখন বুঝলাম, এইভাবে চলা যায় না। শরীরের পরিবর্তন তো জীবনেরই অংশ।”

 

শুধু তাই নয়,আচমকা ফুলে যাওয়া বা হরমোনজনিত পরিবর্তন নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন তিনি। “প্রত্যেক নারীর শরীর সময়ের সঙ্গে বদলায়। আমারও তিরিশের গোড়ায় শরীর বদলেছে, কিন্তু আমার শরীরের খাঁজ নষ্ট হবে না, কারণ আমি সিন্ধি!”, হাসিমুখে উত্তর তাঁর।

 

গ্লোবাল বিউটি স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন তামান্না। “আমি কখনও পশ্চিমা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে নিজেকে মাপব না। ইন্ডিয়ান কার্ভসই আসল সৌন্দর্য। পৃথিবী এখন ভারতীয় নারীর রূপ ও আত্মবিশ্বাসকে ভালবাসে, তাই এখনই সময় নিজের শরীরকে ভালোবাসার,” বলেন অভিনেত্রী।তমন্নার এই বক্তব্যে যেন এক নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রতিধ্বনি। যেখানে ‘পারফেকশন’ নয়, নিজের প্রতি ভালবাসাই হয়ে উঠছে আসল বিউটি সিক্রেট।


প্রসঙ্গত, কিছুদিন এক সাক্ষাৎকারে তমন্না নিজের শরীর সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি সত্যিই আমার শরীরকে ভালবাসি। কাজের ব্যস্ত দিনের শেষে স্নানের সময়, আমি শরীরের প্রতিটি অংশকে স্পর্শ করে ধন্যবাদ জানাই। শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু আমি জানি প্রতিদিন সে কীভাবে আমাকে সহ্য করে।” এই স্বীকারোক্তি শুধু এক তারকার নয়, বরং নিজের শরীর, মন ও সৌন্দর্য নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে এক রূঢ় বার্তা।তমন্না আরও জানান, ছোটবেলায় তিনি মনে করতেন 'ছিপছিপে শরীর' মানেই 'সুন্দর'। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখেছেন, সৌন্দর্য বা আত্মসম্মান কেবল শরীরের মাপে আটকে থাকে না। “একটা সময় ছিল যখন আমি ভাবতাম ছিপছিপে চেহারা হলেই আমি সুন্দর। কিন্তু পরে বুঝলাম, ওটা আসলেই আমাকে ভাল অনুভব করাত না। সুন্দর লাগার অনুভূতি আসলে আমার ওজনের ওপর নির্ভর করত না,”— মন্তব্য তমন্নার।