সমাজমাধ্যম মানেই বিতর্কের আঁতুরঘর আর বলিউড অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী স্বরা ভাস্কর যেন তার অভ্যস্ত এক যোদ্ধা।বলিউডের বিতর্কপ্রিয় মুখ স্বরা ভাস্কর ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রে। “তনু ওয়েডস মনু”, ‘রাঞ্ঝনা’র মত সব ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেত্রী বরাবরই সিনেমার চেয়ে তাঁর বেফাঁস মন্তব্যের জন্য বেশি শিরোনামে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। এবার যৌনতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন স্বরা।

 

সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে যৌনতা নিয়ে বোমা ফাটান স্বরা— “আমরা সবাই উভকামী। মানুষকে নিজের মতো থাকতে দিলে সকলেই উভকামী হবে। শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতিই যৌন আকর্ষণ আসলে আদর্শের মতো করে দেখা হয়, যা হাজার হাজার বছর ধরে মেনে আসা হচ্ছে।” স্বরার মতে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হলে তবেই মানবজাতি বংশবিস্তারের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারবে। এই একটি মাত্র কারণেই বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে যৌনতাকে মান্যতা দেওয়া হয়।

আরও এক ধাপ এগিয়ে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় কার উপর তাঁর ‘ক্রাশ’, তখন নিঃসংকোচে অভিনেত্রী উত্তর দেন— “ডিম্পল যাদব।” উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের স্ত্রী এই ডিম্পল। 

 

অভিনেত্রীর এই মন্তব্যের পরেই ওঠে সমালোচনার ঝড়। অনেকে সরাসরি তাঁকে “ডাক্তার দেখাতে বলেছে”। কেউ কেউ আবার স্বরাকে সমর্থন জানিয়েছেন। স্বরার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আগেও নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কখনও নাগরিকপঞ্জি নিয়ে মন্তব্য, কখনও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের অন্যায় নিয়ে তোপ—সবকিছুতেই তিনি সরব। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর জেরে একদিকে যেমন সমর্থন পেয়েছেন, তেমনই কটাক্ষেরও শিকার হয়েছেন।

 

মাস দু'এক আগে একবার আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মুখ খুলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন স্বরা— এবারে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়ালেন গাজা সংহতির পদযাত্রার ডাক দিয়ে। 

মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে আগামী গত ১৮ জুন এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজন করেছিল দেশের একাধিক বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সংগঠন। স্বরা নিজের এক্স হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এই পদযাত্রার পোস্টার শেয়ার করে লিখেছিলেন— “মুম্বই… আগামী ১৮ জুন প্যালেস্টানের সমর্থনে ডাক দাও !” পোস্টারে স্পষ্ট ভাষায় লেখা, এই জমায়েতের উদ্দেশ্য— "ইজরায়েলের গাজা আক্রমণকে গণহত্যা হিসাবে চিহ্নিত করে তার নিন্দা করা এবং ভারত সরকারের অবস্থানে পরিবর্তনের দাবি তোলা।" এই কর্মসূচিতে যেসব সংগঠন ও রাজনৈতিক দল যুক্ত রয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে— সিপিআই, সিপিআই(এম), সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, সমাজবাদী পার্টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরপিআই (সেকুলার) প্রমুখ।

 

একের পর এক রাজনৈতিক ও মানবাধিকার ব্যাপারে সরব হয়ে ওঠা স্বরা এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন ভাগ দুই মেরুতে। একদল নেটিজেন তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন, বলছেন— “এটাই তো আসল প্রতিবাদ! হিম্মত দেখিয়েছেন।” অন্যদিক থেকে আসছে রীতিমতো আক্রমণাত্মক প্রশ্ন—“সব সময় একপক্ষের হয়ে আওয়াজ তোলেন কেন? পহলগাঁওয়ে যাঁরা নিহত হলেন তাঁদের নিয়ে একটা কথাও বললেন না!”

 
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী সরাসরি মুম্বই পুলিশ ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে ট্যাগ করে স্বরার পোস্ট এবং এই র্যাালির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী কেউ কেউ এই পদযাত্রা বন্ধ করার দাবিও তুলেছেন নিরাপত্তার যুক্তিতে।আগেও বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন স্বরা— সাহস না পক্ষপাত?