এসআইআর চলছে রাজ্যে। এনুমারেশন ফর্ম জমার পর্ব পেরিয়ে এখন চলছে হিয়ারিং পর্ব। ইতিমধ্যেই এই হিয়ারিং পর্ব নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা, শুনানি নিয়ে ‘চরম হেনস্থা’র অভিযোগ তুলেছেন। এবার এই হিয়ারিং পর্ব নিয়েই শোরগোল। কারণ, খসড়া তালিকায় নাম থাকার পরেও, আচমকা ফোন করে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক জয় গোস্বামীকে। 

 

সোমবার, জয়ের স্ত্রী, কাবেরী গোস্বামীকে ফোন করে জানানো হয়। পরিবারের সদস্য তিনজন। জয়, কাবেরী এবং তাঁদের মেয়ে দেবত্রী। এনুমারেশন ফর্ম জমা করেছিলেন নিয়ম মেনে। খসড়া তালিকায় নাম এসেছিল। স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিতে  ছিলেন তাঁরা। কিন্তু আচমকা ফোন সোমবার।জয় অসুস্থ। নভেম্বরেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অস্ত্রোপচার করানো হয়। এখনও সুস্থ হয়ে ওঠেননি। 

 

 

জয়ের স্ত্রী কাবেরী গোস্বামী জানালেন, ২০০২ সালে তাঁর এবং জয়ের নাম ছিল না ভোটার তালিকায়। বয়স না হওয়ার কারণে, স্বাভাবিকভাবে নাম ছিল না দেবত্রী (বুকুন)-এর। তবে ২০০৮ থেকে সস্ত্রীক জয় টানা ভোট দিয়েছেন রাসবিহারীতে। এখন তাঁরা সল্টলেকে থাকলেও, যে বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন এতদিন, সেখানে গিয়েই সমস্ত নিয়ম মেনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে এসেছিলেন কাবেরী নিজে। কাবেরী গোস্বামীর প্রশ্ন তুললেন, “আমার বিজেপির কাছে প্রশ্ন, এই হেনস্থার মানে কী? ভাবুন, জয়কে যদি এই হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হচ্ছে।”

 

গোটা বিষয়টি নিয়ে আজকাল ডট ইন-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল জনপ্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন-এর সঙ্গে। 

 

গোটা বিষয়টি শুনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলে উঠলেন, “রোজ-ই তো কাগজে পড়ছি, টিভিতেও দেখছি চারিদিকে হচ্ছে।  বয়স্ক মানুষদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এটা ভীষণই উদ্বেগের ব্যাপার। এরকম করলে তো মুশকিল! কত অসুস্থ মানুষ আছেন, বয়স্ক মানুষ আছেন, তাঁরা যাবেন কীভাবে। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। বাড়িতে গিয়েই যা করার করা উচিত। কেন এভাবে যে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।  

আর জয়ের তো রানাঘাটে জন্ম। বলতে গেলে, এখানকার আদি বাসিন্দা। ওঁর ভোটের বৈধতা নিয়ে তাই কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না! ওর সঙ্গে এটা অতন্ত্য অন্যায় হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।” 

 

আজকাল ডট ইন-কে কবীর সুমন বললেন, “আপনার থেকেই এই বিষয়টি প্রথম শুনলাম। সুতরাং, সেই প্রেক্ষিতেই আমি জবাবটা দিচ্ছি। এসআইআর-এর উদ্দেশ্যটাই তো হেনস্থা করা। আমার মনে হয়, ভারত সরকার ঠিক করে ফেলেছে, মানুষকে যতভাবে হেনস্থা করা যায়। কাউকে হেনস্থা করা হয়, তার নাম সোনালি বিবি বলে, কারণ তিনি মুসলমান। আর ওদের চোখে তাই তিনি বাংলাদেশি! আমিও তো একজন মুসলমান, আমাকে একবার বাংলাদেশি হিসেবে  ধরুক! একবার ধরুক!” 

 

সামান্য থেমে তিনি বলে উঠলেন, “হ্যাঁ, কখনও সোনালি বিবি, কখনও জয় গোস্বামী। এই গোস্বামী পদবি অর্থাৎ মুসলমান নন, তবে আমি খুব অবাক হব না, যদি শুনি তাদের মাথায় ঢুকেছে গোস্বামী পদবীটাও মানেই বুঝি বাংলাদেশি নাগরিকের! আমি সত্যিই খুব অবাক হব না, কারণ যেদিকে চলেছে এই দেশটা...এই দেশটা একটা পাগলদের দেশ হয়ে যাচ্ছে। এই পুরো দেশটার নাম এবার রাখা উচিত রাঁচি!”

 

 

“শুনুন, জয় গোস্বামী যদি বড় কবিও না হতেন উনি তো দিনের শেষে এ দেশের একজন নাগরিক, একজন বয়স্ক সাধারণ মানুষ। ওঁর স্ত্রী যেখানে বলছে যে উনি অসুস্থ, যেতে পারবেন না। তা সত্বেও তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এর পর আর কী করার থাকতে পারে? আমরা কী করব? এটা ভয়ঙ্কর অন্যায়! ভয়ঙ্কর অন্যায়! আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি এই ঘটনার। ধিক্কার জানাচ্ছি। আর আশা করব এর বিহিত হোক!”