২০২৫ সালের পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবিগুলির ব্যবসায়িক টানাপোড়েন থেকেই এবার টলিউডে বদলে যাচ্ছে মুক্তির নিয়ম। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ও শো-টাইম নিয়ে প্রকাশ্যে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক - সবাই। একসঙ্গে চারটি ছবি মুক্তির ফলে প্রযোজক থেকে মালিক, সকলেরই নাভিশ্বাস উঠেছিল। একসঙ্গে এতগুলো ছবির মুক্তি এবং ছবির প্রদর্শন সময় নিয়ে খোলাখুলি নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন একাধিক প্রযোজক-পরিচালক। বিষয়টিতে যোগ দিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধারেরাও। প্রেক্ষাগৃহের মালিক এবং পরিবেশকেরা জানিয়েছিলেন, একসঙ্গে অনেক ছবি মুক্তি পেলে তাঁদের উপরেও প্রবল চাপ তৈরি হয়। এই অস্থিরতা কাটাতে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা), ফেডারেশন এবং প্রযোজকদের বৈঠকের পর নতুন কিছু নিয়ম চালু হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা মনে করছেন, এই নিয়মগুলি কার্যকর হলে বাংলা ছবির বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা অনেকটাই কমবে।

দীর্ঘ আলোচনার পর বুধবার রাজ্য সরকার গঠিত ‘স্ক্রিনিং কমিটি’র এক বৈঠকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলা ছবিমুক্তির তালিকা প্রকাশ্যে এল। ইম‌পার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত এবং ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস যৌথভাবে এই তালিকা ঘোষণা করেছেন।

 

বৈঠকের সিদ্ধান্তে ঠিক হয়েছে, বড়দিনে মুক্তি পাবে তিনটি বড় ছবি। দেব ও মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘প্রজাপতি ২’, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত একটি বড় বাজেটের ছবি (যা ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ বা কাকাবাবু ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন ছবি বিজয়নগরের হিরে হতে পারে) এবং কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘মিতিন মাসি’ সিরিজের নয়া ছবি। পিছোল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের প্রযোজনা সংস্থার নতুন ছবি ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’এর মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছেন। এটি এখন আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ -এর ২৩ জানুয়ারিতে মুক্তি পাবে। পিছিয়েছে অঙ্কুশ হাজরার ‘নারী চরিত্র বেজায় জটিল ’ ছবিও। আজকাল ডট ইন-কে জানিয়েছেন তাঁর প্রযোজিত ও অভিনীত এই ছবি এবার মুক্তি পাবে ৯ জানুয়ারি। উল্লেখ্য, ২৩ জানুয়ারি বড়পর্দায় মুক্তি পাবে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত হোক কলরব ছবিটিও।

 

এই সিদ্ধান্তে কি তাঁর প্রযোজনা সংস্থার ছবির ব্যবসায় প্রভাব পড়বে? পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছেই এই প্রশ্ন রেখেছিল আজকাল ডট ইন।শোনামাত্রই দৃঢ় স্বরে এই জনপ্রিয় পরিচালক-প্রযোজক বললেন, “দেখুন, পুজোর সময় একসঙ্গে চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তার ফলে পরিচালক-প্রযোজক-প্রেক্ষাগৃহ মালিক সবাইকেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কারণ একসঙ্গে চারটে ছবি প্রেক্ষাগৃহে চালানো প্রায় অসম্ভব। এবার বড়দিনে সেখানে পাঁচটি ছবির মুক্তি পাওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। তাই, ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতেই হত যে কোনও দু’টি ছবিকে সরিয়ে দেওয়ার। এবার আসি ব্যবসার কথায়। বৃহত্তর স্বার্থের কথা দেখলে এবং ভাবলে নিজের স্বার্থের কথা ভাবলে চলে না। ইন্ডাস্ট্রির ভাল আমরা সবাই চাই। আর আমি তো একা নয়। অঙ্কুশ, ফিরদৌসুল হাসান সবাই নিজেদের ছবির মুক্তির তারিখ পিছিয়েছেন গোটা পরিস্থিতি দেখে।”

 

প্রশ্ন ছিল, এই সিদ্ধান্তে আদৌ কি খুশি তিনি? দৃপ্ত স্বরে ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’-এর প্রযোজক বললেন, “এখানে খুশি অখুশির ব্যাপার নয়। ওই যে বললাম, ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থের ব্যাপার। সেই জায়গা থেকে কাউকে না কাউকে তো একটু এগোতে হবে, পিছোতে হবে। সারা জীবন-ই তাই হয়ে এসেছে। ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থের কথা-ই আমাদের সবার দেখা উচিত এইটুকুই। আমরা যাঁরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রযোজক, তাঁরা একটা বৃহত্তর লক্ষ্যকে মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এটা সবে শুরু। আশা করব, ভবিষ্যতে এটা সবাই মাথায় রেখে এগোবে। আর সত্যি কথা বলতে কী, এই ইন্ডাস্ট্রি তো আমাদের ঘরবাড়ি, এখানেই বড় হয়েছি, জীবন কাটছে। তাই এখানকার পরিবেশ সুস্থ রাখা, সুন্দর পরিবেশ রাখা এর ভাল চাওয়াটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

 

তবে কথাশেষে 'রক্তবীজ'-এর অন্যতম এই পরিচালক বললেন, “তবে একটা কথা, যাঁরা তাঁদের ছবি নির্ধারিত মুক্তির তারিখ থেকে পিছিয়ে দিল, যেমন আমাদের ছবিটি, এসভিএফ সংস্থার একটি ছবি...এই দু'টি ছবি কিন্তু যখন মুক্তি পাবে তখন কিন্তু তারা প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া, হল-শেয়ারিং এবং ছবির প্রদর্শন সময়, ‘প্রাইম টাইম শো’ সবকিছুর বিষয়েই তাদের অগ্রাধিকার থাকবে। এটাও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।”