বলিউডের অন্যতম বড় তারকা সঞ্জয় দত্ত। রুপোলি পর্দায় তাঁর ঝলমলে যাত্রা যেমন আলো কুড়িয়েছে, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনে কেটেছে ঝড়ঝঞ্ঝার দিন। তাঁর কিংবদন্তি বাবা-মা তথা অভিনেতা সুনীল দত্ত ও নার্গিসের অকালপ্রয়াণ তাঁকে ভিতরে ভিতরে ভেঙে দিয়েছিল। তার পর ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় জড়িয়ে কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে। সম্প্রতি, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’-তে হাজির হয়ে সেই দিনগুলিরই অকপট গল্প শোনালেন সঞ্জয়।

 

“একটাই আক্ষেপ— বাবা-মা খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন” মন্তব্য সঞ্জয়ের।  আলোচনার শুরুতেই 'মুন্নাভাই' জানালেন, তাঁর জীবনের নানা বিপর্যয় নিয়েই কোনও আক্ষেপ নেই। তবে একটি কষ্ট আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। অভিনেতার কথায়, “আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, তার জন্য আমি কোনওদিন অনুতপ্ত নই। একটাই আক্ষেপ— আমার বাবা-মা আমাকে ছেড়ে খুব তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছেন। আমি তাঁদের ভীষণ মিস করি।”

 

কারাগারে রেডিও, থিয়েটার, কাঠমিস্ত্রির কাজ করার সব অজানা ঘটনা ফাঁস করলেন খলনায়ক ছবির তারকা।  এই আলোচনার মাঝেই অর্চনা পূরণ  সিং জানতে চান, জেলে কাঠমিস্ত্রির কাজ শিখে যে আসবাব বানিয়েছিলেন, সেগুলোর কী হল। উত্তরে সঞ্জয় জানান—“জেলে আমি মজুরি পেতাম। চেয়ার হোক বা কাগজের ব্যাগ, যা বানাতাম, তার জন্য টাকা দিত। এমনকী, আমি ওখানে একটা রেডিও স্টেশনও শুরু করেছিলাম— নাম ছিল, রেডিও ওয়াইসিপি। সেটা শুধুই জেলের ভিতরে বাজত। আমার করা সেই প্রোগ্রামের জন্য টাকা পেতাম। আমরা নানা টপিক নিয়ে কথা বলতাম, মাঝে মাঝে কমেডিও হত। আরও তিন-চার জন বন্দি শো-এর চিত্রনাট্য  লিখত।”

 

সেইসঙ্গে তিনি জানালেন, কারাগারের মধ্যেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি নাট্যদল । সেই দলের তিনি ছিলেন পরিচালক, আর খুনের দায়ে দোষী বন্দিরা ছিলেন সেই দলের সব অভিনেতা!


এই আড্ডায় জেলের এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাও শোনালেন অভিনেতা। একবার জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তাঁকে দাড়ি কামানোর নির্দেশ দেন। সঞ্জয়ের স্মৃতিচারণ—“আমার তখন বড় দাড়ি। দাড়ি কাটানোর জন্য সুপারিন্টেন্ডেন্ট এক ব্যক্তিকে পাঠালেন। হাতে ধারালো ক্ষুর নিয়ে চটপট আমার সামনে বসে পড়লেন তিনি। আমি জানতে চাইলাম, তাঁর নাম। জানলাম, সবাই ওঁকে মিশ্রাজি বলে ডাকে। জিজ্ঞেস করলাম, কত দিন ধরে জেলে আছেন। বললেন— ১৫ বছর। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, কী অপরাধে? উত্তর এল— জোড়া খুন!  শোনামাত্র তখনই আমি তাঁর হাত চেপে ধরলাম। ভেবে দেখুন, একজন জোড়া খুনের আসামির হাতে ধারালো ক্ষুর আর সেটাও আমার গলায় ধরা!  অবশ্য এটাই ছিল জেলের নিত্যদিনের বাস্তব।”

 

সঞ্জয়ের অকপট স্বীকারোক্তি, কারাগারের অন্ধকার দিনগুলো আজও যেন তাঁকে ছেড়ে যায়নি। তবে সঞ্জয় দত্তর মনের জোরই তাঁকে জীবনের প্রতিটি ধাক্কা কাটিয়ে ফের বড়পর্দায় ফিরিয়ে এনেছে। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট— বিপদ, কষ্ট, আক্ষেপ সবকিছু পেরিয়েও জীবনকে ভালবাসা, ভালবেসে যাওয়াই একমাত্র পথ।