নিজস্ব সংবাদদাতা: কাজ করার পরে পারিশ্রমিক না পাওয়া নিয়ে টলিপাড়ায় আগেও শোরগোল পড়েছে। এবার সরব লেখক-লেখিকারা। যাঁদের লেখায় ফুটে ওঠে সিরিজ, সিনেমা, ধারাবাহিকের আসল রস, তাঁরাই বঞ্চিত প্রাপ্য সম্মান থেকে! ক্ষোভ উগড়ে দিলেন লেখিকা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে।

 

 

 

অনেকদিন ধরেই সমাজমাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার তিনি। এবার আরও বিস্ফোরক। ঘটনার সূত্রপাত লেখক সৌমিত দেবের একটি পোস্ট ঘিরে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বেশ কয়েকটি নামী প্রযোজনা সংস্থা এবং পরিচালকের কাছে বকেয়া পারিশ্রমিক চাইতে গেলে অপমানিত হন। এবং বারবার পারিশ্রমিক চেয়েও পান না। এই অবমাননাকর ঘটনায় সরব হয়েছেন লেখক অর্পণ গুপ্ত। 

 

 

 

তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, 'দু'বছর হল বাংলা ছবিতে সামান্য লেখালিখির সুযোগ পেয়েছি। লিখছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কী শুনতে হয়েছে জানেন? 'তুই তো একটা চাকরি করিস, এই কাজ তো শখ, টাকাটা ইম্পর্ট্যান্ট না...'

 

আজ্ঞে ইম্পর্ট্যান্ট। একশোবার ইম্পর্ট্যান্ট। অফিসের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। অফিস করি বলে তো কাজে গাফিলতি করিনি। ডেডলাইন মেনে লেখা জমা করেছি। পরিশ্রম দ্বিগুন করেছি- তাহলে পেমেন্টে ডিলে হবে কেন? একাধিক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, বলা হয়েছে সিনপসিসটা দাও, ফার্স্ট ড্রাফট দাও, তারপর পেমেন্ট- কেন? ডেভেলপমেন্ট ফিজ-এর বিষয়ে কি এ বাজারে মানুষ অবগত নন? এতটা লেখার পর যদি প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায় তার দাম কে দেবে তখন?

 

এ প্রশ্নগুলো করা জরুরি। আমরা করি না। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার আশু প্রয়োজন আজ।'

 

 

 

সৌমিত ও অর্পণের পোস্ট দেখে সম্রাজ্ঞী লেখেন, 'অর্পণের পোস্ট থেকে সৌমিত দেবের এই পোস্ট দেখলাম আর মনে হল কিছু কথা লিখি। কলকাতার একটি নামকরা চ্যানেল নিজে ডেকে প্রজেক্ট ফাইনাল বলে অসংখ্য মিটিং করে , প্রচণ্ড তাড়া দিয়ে খানিকটা লিখিয়ে তারপর আমি ফোন করা অবধি জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি যে প্রজেক্টটা হোল্ডে আছে। গত বছরের কথা। আমি ফোন করে জানতে চাওয়ায় জানতে পারি, অর্থের কথা বলায় বলা হয় হ্যাঁ নিশ্চয়ই দেওয়া তো উচিতই, কিন্তু সে অর্থ আর কোনওদিন আসেনি। যে টেলিফোন আসার কথা, উঁহু সে টেলিফোনও আসেনি। কলকাতায় খুব ঘরোয়া ভাবে কাজ হয় তাই সেখানে আবার টাকার কথা বলা যায় না যখন তখন, বললে দাগিয়ে দেওয়া হয়। এখানে কাজের থেকে কথা বেশি। চা আড্ডা গসিপ, ডেডলাইন সব আছে। কিন্তু টাকা? লেখকের আবার টাকা লাগে নাকি? না লিখলে লেখক নিশ্বাস নিতে পারবে না সেই জন্যই তো সবাই সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে সে লিখতে পারে। কী কাণ্ড সেই লেখকরা আবার টাকা চায়! যে কনসেপ্ট, যে গল্পের উপর ভিত্তি করে একটা এন্টায়ার প্রজেক্ট শুরু হয় তাকে পুরো বাজেটের পাঁচ শতাংশও দেওয়া হয় না। পোস্টারে নাম দেওয়া হয় না বহু সময়।'

 

 

 

সম্রাজ্ঞী আরও লেখেন, 'কলকাতায় যে টাকাটা দেওয়া হয় তাতে কোনও লেখকের শ্রমের সঠিক মূল্য হয় না। তারপর প্রতিনিয়ত তাকে মার্জিন থেকে বিচ্যুত করতে করতে মূল্যহীন করে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা তা আবার সব্বাই ভুলে যান যখন নতুন প্রজেক্ট চলে আসে দোরগোড়ায়। লেখককে তার প্রাপ্য অর্থ, সম্মান ও ক্রেডিট দিন। ইন্ডাস্ট্রিতে সব্বাই এক কথায় মেনে নেবেন যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ভাল লেখকের। তাঁদের পিছনে একটু লগ্নি করুন আপনাদের ভদ্র ব্যববার ও অর্থ, দেখবেন অনেক অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। ব্রাহ্মি শাক খান, লেখকদের ঠিক মনে পড়বে। তাদের সঠিক মূল্যে।'