আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডা অভিনীত ‘সাইয়ারা’-র গল্প কি দক্ষিণ কোরিয়ার কাল্ট রোমান্টিক ছবি ‘আ মোমেন্ট টু রিমেমবার’-এর ছায়া? মুক্তির পর থেকেই প্রশংসা ও বিতর্ক—দুইয়ে গা ভাসিয়ে চলেছে পরিচালক মহিত সুরির এই প্রেমের ছবি। একদিকে ২১ কোটি টাকার জমকালো ওপেনিং, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে মৌলিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন!
‘সইয়ারা’—গল্পে প্রেম, সুরে আবেগ। ১৮ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক বদরাগী সুরকার কৃষ কপূর (আহান) ও এক শান্ত, অন্তর্মুখী সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেয়ে, বাণী (অনীত)। সুর ও স্বপ্নে বাঁধা প্রেমের এই জুটি হঠাৎই এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি—বাণীর মস্তিষ্কে ধরা পড়ে অ্যালঝাইমারস। এবং সেখান থেকেই শুরু হয় প্রেমের কঠিন পরীক্ষা।
তবে এই প্লটটা কি চেনা চেনা নয়? ঠিক এখানেই শুরু বিতর্ক। নেটিজেনরা বলছেন, ছবির গল্পটা ২০০৪-এর কোরিয়ান ফিল্ম ‘ আ মোমেন্ট টু রিমেমবার’-এর হুবহু ছায়া। সেই ছবিতেও প্রেম, বিভ্রান্তি, মেয়েটির স্মৃতিভ্রংশ হওয়া, অতীতকে মনে করানো—সব মিলছে হুবহু।
একজন লিখেছেন—“ অ্যালঝাইমারস, পুরনো প্রেমিকার বিভ্রান্তি, পালিয়ে যাওয়া মেয়ে—এমনকি শেষ দৃশ্যেও পুরনো মুহূর্ত রিক্রিয়েট! সব মিলিয়ে ‘সইয়ারা’ যেন ‘ আ মোমেন্ট টু রিমেমবার’--এর ফ্রেম টু ফ্রেম প্রতিচ্ছবি!”অন্যজন টিপ্পনি কাটেন—“মোহিত সুরির কোরিয়ান প্রেম কি থামবেই না?” এক ভিলেন-এর পর এবার সাইয়ারা !”
কিন্তু সবাই একমত নন। অন্য দিকে কেউ কেউ আবার বলছেন— “যদি টোকেও, ফাটাফাটি টুকেছে! নিজস্বতার ছাপও রেখেছে। কমবেশি সব শিল্পীই চুরি করেন কিন্তু সেই চুরি করে কীভাবে তার সঙ্গে নিজের ভাবনা মিশিয়ে দেন তিনি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।”আরেকজন মন্তব্য করেন— “আলঝেইমার্স প্রেমকাহিনি তো বিশ্বজনীন — সব মিল থাকলেই কপি হয় না!”.”
তবে সঙ্গীতে বাজিমাত করেছে এই ছবি । ছবির আরেক বড় সম্পদ—মিথুন, তানিশ্ক বাগচি সহ সাতজন মিউজিক ডিরেক্টরের দারুণ কম্বো। প্রেম, যন্ত্রণা ও বিছেদের আবেগে ভরা গানগুলো ইতিমধ্যেই হিট।
নতুন মুখ আহান পাণ্ডে ও অনিত পাড্ডাকে নিয়ে তৈরি এই প্রেমের কাহিনি ইতিমধ্যেই তিন দিনের মাথায় ১০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। বলিউডের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ছবি হিসেবে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে ‘সইয়ারা’, আর এই রেকর্ড এখনও থামেনি।
পরিচালকের মতে, “ভাল প্রযোজক, ভাল পরিচালক, শক্তিশালী স্ক্রিপ্ট, সুরেলা সঙ্গীত আর তারকামুখ হোক বড় বা নতুন—যদি বাজেট ব্যালান্সড হয় আর সিনেমা ভালভাবে শুট হয়, তাহলে সাফল্য নিশ্চিত। এর বাইরে কিছু লাগে না। সিনেমা জিন্দাবাদ!”
এটা শুধু একটি নতুন জুটি নিয়ে তৈরি রোম্যান্টিক ছবি নয়, এটা বলিউডকে তারকাকেন্দ্রিক থেকে গল্পকেন্দ্রিকের দিকে ফেরানোর এক সাহসী পদক্ষেপ
তাহলে এই ছবি কি রিমেক? এই প্রশ্নের জবাবে এখনও মুখ খোলেননি পরিচালক বা প্রযোজক সংস্থা যশ রাজ ফিল্মস। আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটিকে ‘রিমেক’ বলা হয়নি, তবে অনুপ্রেরণা থাকতেই পারে।
‘সাইয়ারা’ হয়তো অনেকের মনে পুরনো ছবি মনে করিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আহান-অনীতের অভিনয়, আবেগঘন চিত্রনাট্য আর সুরের জাদু মিলিয়ে ছবিটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠিকই। এখন দেখার, পরিচালক মোহিত সুরি ভবিষ্যতে এই তুলনা নিয়ে কী বলে!
 
 প্রসঙ্গত, হিন্দি বাণিজ্যিক সিনেমার দুনিয়ায় বড় তারকাদের কদর নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই প্রথাগত নিয়ম ভেঙে দুই নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রীর জুটির কাঁধে ভর করে বক্স অফিসে বাজিমাত করল ‘সইয়ারা’। আর সেই সাফল্যে বেজায় খুশি পরিচালক সুভাষ ঘাই। ‘তাল’, ‘পরদেশ’-এর মতো কালজয়ী ছবি যাঁর ঝুলিতে, তিনি এবার ‘সইয়ারা’কে কুর্নিশ জানালেন শুধুমাত্র তার হৃদয় ছোঁয়া গল্প আর ব্যালান্সড প্রোডাকশনের জন্য।
 
 নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে সুভাষ ঘাই লেখেন, “যখন নতুন মুখের ছবি বক্স অফিসে সুনামি তোলে, তখন এটা আমাদের স্পষ্ট বার্তা দেয়—গল্পের চেয়ে বেশি বাজেট নয়, অভিনেতার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নয়, তারকাদের খেয়াল-খুশিতে খরচ নয়, স্টান্ট মার্কেটিং নয়—দর্শক এখন খাঁটি গল্প খুঁজছে। সারা ভারত জুড়ে তাঁরা এমন সিনেমাকেই আপন করে নিচ্ছে।”
এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি প্রযোজক ও বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন, যেন বিপুল তারকা-খরচা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গল্প ও নির্মাণে জোর দেন। ঘাই আরও লেখেন, “আদিত্য চোপড়া ও মহেশ সুরিকে কুর্নিশ জানাই—হিন্দি কমার্শিয়াল সিনেমার মূলে যেটা থাকা উচিত, তা-ই প্রমাণ করে দিলেন তাঁরা। ‘সইয়ারা’ এখন ইতিহাস।”
