নিজস্ব সংবাদদাতা: আর জি কর প্রতিবাদে রাত দখল কর্মসূচিতে বুধবার যোগ দিতে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কিন্তু শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে হাজির হতেই তাঁকে দেখে উঠল 'গো ব্যাক' স্লোগান। এদিন রীতিমত জনরোষের মুখে পড়েন অভিনেত্রী।
১৪ অগস্ট যখন রাত দখল হয় তখন শহর তথা দেশে না থাকার কারণে যোগ দিতে পারেননি ঋতুপর্ণা। তার দুদিন পর প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে শঙ্খ বাজাতে গিয়ে চরম কটাক্ষের শিকার হন তিনি। সেই ঘটনার পর এদিন অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর যখন ফের রাত দখলের ডাক দেওয়া হয় আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে সহ নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু তাঁকে সেখানে দেখে খেপে ওঠেন সাধারণ মানুষ। গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যেতে চাইলেও নিস্তার পাননি। ঋতুপর্ণার গাড়িতে রীতিমতো ধাক্কা দেন আন্দোলনকারীরা। জোটে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজও। এমনকী আন্দোলকারীরা জুতো ছুঁড়ে মারেন অভিনেত্রীকে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন টলিপাড়ার তারকারা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন চৈতি ঘোষাল। আজকাল ডট ইনকে অভিযোগের স্বরে তিনি বলেন, "এই ঘটনা শুধু ঋতুপর্ণার নয়, মেয়েদের অপমান। একজন মেয়ের ন্যায় বিচারের জন্য যেখানে লড়ছে সবাই, সেখানে কীভাবে আর একজন মেয়েকে হেনস্থা করতে পারেন জনগণ? আমি ধিক্কার জানাই এই মানসিকতাকে মানুষজনকে।"
এদিন ঋতুপর্ণাকে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে ছুটে আসেন ঋষভ বসু। তাঁর কথায়, "এই দিন যে দেখতে হবে ভাবিনি। বেক্তিগত বিদ্বেষের কারণে একজন মহিলার সঙ্গে এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। অনেকেই আমার দিকে আঙ্গুল তুলেছেন যে আমি ঋতুদিকে ডেকে পাঠিয়েছি। কিন্তু এই রাত জাগায় কোনও প্রচারের উদ্দেশ্যে ঋতুদি আসেননি। নিজের তাগিদে এসেছিলেন। আমরা না থাকলে জনরোষে পড়ে কী হাল হত ওঁর ভাবলেই ভয় করছে।"
সৌরসেনী মৈত্র বলেন, "এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সাধারণ জনগণ নারীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। আর সেখানেই অন্য একজন নারীকে এইভাবে অপমান মেনে নেওয়া যায়না। শুধু একজন অভিনেত্রী বলেই নয় ঋতুদি সর্বোপরি একজন নারী। এই কথা কীভাবে সবাই ভুলে গেলেন?"
ঘটনার প্রতিবাদ করে সুদীপ্তা চক্রবর্তী সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "আপনারা তাঁর অবস্থান দেখলেন না। অথচ ভুয়ো ভিডিওটি দেখে ঘৃণা উগরে দিলেন। আপনার তাঁকে লক্ষ্য করে 'গো ব্যাক' স্লোগান দিলেন। তিনি তা-ও মেনে নিলেন। এলাকা ছেড়ে দিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি যখন গাড়িতে বসে রয়েছেন তখন হামলা চালালেন। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি! আমি এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করি। আপনারা কী ভুলে গিয়েছেন নারীদের রাত দখলের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন? মহিলাদের সম্মান, অধিকার রক্ষার দাবিতে যে আপনারা মিছিলে শামিল হয়েছিলেন ভুলে গিয়েছিলেন? কীভাবে এটা করতে পারলেন? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যা হয়েছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করি।"
ঋতুপর্ণার হেনস্থার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সবাই আন্দোলনে সামিল হতে পারেন। কেউ কাউকে আটকাতে পারেন না।'
