রবীবাসরীয় সন্ধ্যায় কলকাতা বর্ণিল হয়ে উঠল আনন্দ আর উদযাপনে। অ্যাড-মৃণ এন্টারটেইনমেন্ট প্রা. লি. আয়োজিত ৫ম বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং দ্বিতীয় কলকাতা রত্ন সম্মান-এর মঞ্চে একত্র হলেন নানা ক্ষেত্রের গুণীজন। এই সন্ধ্যা শুধু জাঁকজমকেই ভরপুর ছিল না। তার সঙ্গেই মানুষের নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর সাফল্যকে সম্মান জানানোর উপলক্ষও ছিল বটে।
সূর্য ডুবতেই কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে চাঁদের হাট। একে একে তারকারা এসে ছড়ালেন দ্যুতি। কলকাতা, মুম্বই থেকে বাংলাদেশ, মুছে গেল ভূগোলের দূরত্ব। প্রতিভা এবং মেধার বিনিসুতোয় গাঁথা হল সাফল্যের গাথা। গান, করতালি আর সম্মিলিত উচ্ছ্বাসে বাঁধা থাকল অনুষ্ঠানের সুর।
কর্মব্যস্তার মাঝেই এই অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ থেকে কলকাতা উড়ে এসেছিলেন চঞ্চল চৌধুরি। অভিনয় ক্ষেত্রে তাঁর অপরিসীম অবদানের জন্য পুরস্কৃত হলেন। এই শহরের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর আজকের নয়। এখন পুরোদস্তুর কাজও করছেন টলিউডে। অভিনেতার কথায় “এখানে এসে খুব ভাল লাগে। কাজের জন্য মানুষ সম্মান পান, এটা তো সকলেই চায়। যে কোনও পুরস্কার কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দেয়। মনে হয়, ভবিষ্যতে যেন আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারি। দর্শককে আরও বেশি বিনোদন দিতে পারি। একজন শিল্পী হিসাবে এর থেকে বেশি কী-ই বা চাওয়ার থাকে।”
এখানেই থামলেন না ‘কারাগার’-এর রহস্য-মানব। জানালেন, কলকাতার সঙ্গে তাঁর সখ্য বহু কালের। এক সময় বাংলাদেশ থেকে এখানে আসতেন থিয়েটার করতে। এখন ছবির কাজ, নানা অনুষ্ঠানের কারণে সেই যাতায়াত বেড়েছে। গভীর হয়েছে সখ্য। আসন্ন কাজ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, “সামনে যে কাজগুলি আছে, সবই ছবির। কিছু বাংলাদেশের, কিছু কাজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই বছর, সামনের বছর মিলিয়ে বেশ কিছু কাজ আছে।”
ইতিমধ্যেই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘পদাতিক’ ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন চঞ্চল। আগামীতে কলকাতার কোন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক তিনি? জানতে চাওয়া হলে অভিনেতার উত্তর, “ভাল চিত্রনাট্য পেলে, এখানে যাঁরা ভাল নির্মাতা আছেন, সকলের সঙ্গেই কাজ করার ইচ্ছা আছে।”
চঞ্চলের পরেই অনুষ্ঠানে হাজির হলেন বিশেষ অতিথি বলিউড তারকা মন্দাকিনী। ‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লি’র নায়িকার আগমনে হর্ষধ্বনি চারদিকে। উল্লসিত অনুরাগীরা। ধূসর রঙা কাজ করা শাড়ি, হালকা গোলাপি ব্লাউজে ৬২-র অভিনেত্রীর থেকে চোখ ফেরানো দায়। কপালে টিকলি, গলায় হার, হাতে এক গোছা চুরি, যেন আটের দশকের ফ্যাশনে নতুন করে ছুঁইয়ে দিলেন প্রাণকাঠি। ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে বললেন, “কলকাতায় আমার যাতায়াত লেগেই থাকে। এখানকার অনুষ্ঠান, পুজো আমার খুব ভাল লাগে। আজ এই অনুষ্ঠানে প্রতিভাবান শিল্পীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। তার অংশ হতে পেরে আনন্দিত।”
পর্দা থেকে বহু বছর ধরে দূরত্ব বজায় রেখেছেন মন্দাকিনী। টলিউড হোক বা বলিউড, ফের কি অভিনয়ে ফিরবেন নায়িকা? বললেন, “ভাল প্রস্তাব এলে নিশ্চয়ই করব।”
‘বেলা’ নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের। সেই ব্যস্ততার মাঝেই এলেন অনুষ্ঠানে। লাল শাড়ি, চুলে ফুল, কপালে টিপ, ভারী গয়না, নায়িকার সাজ ছিল দেখার মতো। পুরস্কৃত হয়ে তিনি বলেন, “এত গুণীজনদের সঙ্গে পুরস্কার পেয়ে নিজেকে খুব ধন্য মনে হচ্ছে।”
এই অনুষ্ঠানের সুবাদে মন্দাকিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঋতুপর্ণার। পছন্দের নায়িকাকে চাক্ষুষ করে, কথা বলে উচ্ছ্বসিত টলিউডের অন্যতম সফল নায়িকা। বললেন, “মন্দাকিনীজিকে বললাম, আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন ‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লি’ রিলিজ করেছিল। তখন সেটা আমাদের কাছে খুব বিস্ময়কর একটা ব্যাপার ছিল। গানগুলো খুব সুন্দর ছিল। আজ ওঁকে একটা ট্রিবিউট দিলাম।” তারপরেই মিষ্ঠি কণ্ঠে তুললেন ‘রোজ রোজ আখোঁ তলে’র সেই অমলিন সুর।
