ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিচালকদের একজন এস এস রাজামৌলি। কিন্তু ‘বারাণাসী’ ছবির নাম ঘোষণা অনুষ্ঠানে তাঁর এক আবেগঘন মন্তব্যেই যেন বিতর্কের তীব্র আগুন জ্বলল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনুষ্ঠানে একাধিকবার প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখে খানিক ক্ষুব্ধ রাজামৌলি জানিয়েছিলেন,  তিনি ঈশ্বরে তেমন বিশ্বাস করেন না। এবং এ দিন ঘটে যাওয়া ভুলকে তিনি ঈশ্বরের ‘সহায়তা’ হিসেবে অনুভব করতে পারেননি। তাঁর কথায়, আমার বাবা বলেছিলেন, হনুমানজি সব সামলে নেবে। তাহলে আমার এই সমস্যায় কেন তা হলে হনুমানজি সাহায্য করলেন না? তা এভাবে সামলায়? এটা ভেবেই আমার রাগ হচ্ছে।”  আসলে, ওই অনুষ্ঠানে একের পর এক নানান প্রযুক্তিগত নানান সমস্যা হচ্ছিল, যার জেরেই সম্ভবত এই মন্তব্য করেন পরিচালক। বলাই বাহুল্য, রাজামৌলির এমন মন্তব্যেই চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। এরপর তিনি আরও বলেন,“আমার স্ত্রীও হনুমানজিকে খুব ভালবাসে। বন্ধুর মতো কথা বলে ওঁর সঙ্গে। ওকেও রাগ করে বলেছি। তিনি আদৌ দেবতা তো?”

 

রাজামৌলির এই মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বললেন ‘ধর্মীয় অবমাননা’, কেউ আবার দাবি করলেন ‘ইচ্ছাকৃত ব্যঙ্গ’। ১৫ নভেম্বর বানর সেনা সংগঠন রাজামৌলির বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে পুলিশি অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু বিতর্কের উত্তাপের মাঝেই ঘটনাকে অন্য রূপ দিলেন বলিউডের বিদ্রোহী নির্মাতা রাম গোপাল বর্মা।

 

শুক্রবার একের পর এক বিস্ফোরক টুইটে বর্মা লেখেন, “ভারতে নাস্তিক হওয়া কোনও অপরাধ নয়। সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ আপনাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস দুই-ই করার অধিকার দেয়। তাই রাজামৌলিরও সম্পূর্ণ অধিকার আছে ‘আমি বিশ্বাস করি না’ বলার।” শুধু তাই নয়, ‘ধর্মীয় চলচ্চিত্র বানান, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না’-এই অভিযোগকেও তিনি কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তাঁর খোঁচা, “তা হলে কি গ্যাংস্টার সিনেমা বানাতে হলে পরিচালককে গ্যাংস্টার হতে হবে? ভূতের সিনেমা বানাতে হলে ভূত হতে হবে?”

?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1991769381064650832%7Ctwgr%5Ed5cf22e321d59a2f3fb03f1e09d01555849d413f%7Ctwcon%5Es1_c10&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.hindustantimes.com%2Fentertainment%2Ftelugu-cinema%2Fram-gopal-varma-defends-ss-rajamouli-amid-backlash-over-his-remarks-on-god-being-an-atheist-in-india-is-not-a-crime-101763710927528.html

 

 

 

 

কিন্তু বর্মার সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া বক্তব্য ছিল এখানেই, “ঈশ্বর যদি সত্যিই থাকেন, তবে তিনি রাজামৌলিকে বিশ্বাসহীনতার জন্য শাস্তি দেননি; বরং দিয়েছেন ১০০ গুণ সাফল্য, সম্পদ, সম্মান। তাই সমস্যাটা ঈশ্বরের নয়, সমস্যাটা সেই সব লোকেদের যাঁরা বিশ্বাস করেও কিছু অর্জন করতে পারেননি।”

 

তাঁর যুক্তি আরও তীক্ষ্ণ হয় পোস্টের শেষের লাইনগুলোয়, “রাজামৌলির নাস্তিকতা ঈশ্বরকে ছোট করে না। বরং যাঁদের বিশ্বাস এতটাই নড়বড়ে যে কারও অবিশ্বাসে তা ভেঙে পড়ে, তাদেরই নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দেয়। হিংসুটেদের বুক ফাটে! ঈশ্বর ঠিক আছেন, রাজামৌলি ঠিক আছেন। কষ্টে আছেন শুধু যাঁরা এটা বুঝতে পারছেন না।”

 

এদিকে, ‘বারাণাসী’ ছবিতে মহেশ বাবু, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও পৃথ্বীরাজ অভিনয় করছেন। মুক্তির আগেই সিনেমাটি এখন থেকেই বিতর্কের উঠোনে ঢুকে পড়ল। আর রাজামৌলির এই বিশ্বাস, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আপাতত জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।