নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০২০-র মার্চে প্রয়াত হয়েছিলেন অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। বড়পর্দার পাশাপাশি ছোটপর্দাতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন সন্তু। পাশাপাশি মঞ্চ, যাত্রা সব ক্ষেত্রেই নিজের ছাপ রেখে গেছেন তিনি। ছোট পর্দাতেও কাজ করেছেন শেষ জীবন অবধি। ‘হারমোনিয়াম’, ‘সংসার সীমান্তে’, ‘গণদেবতা’-সহ অজস্র ছবিতে তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শককুল। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গানও গাইতেন সন্তু। ১৩ জানুয়ারি সোমবার প্রয়াত এই বিখ্যাত অভিনেতার জন্মবার্ষিকী।
পাঁচ বছর ধরে এই দিনটিএকাকী উদ্যাপন করে চলেছেন সন্তু-কন্যা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ২০২০ সালে সন্তু মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর জীবনটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে স্বস্তিকার। তবে গত কয়েক বছরে নিজেকে খানিকটা গুছিয়েছেন তিনি। সারা বছরই বাবার অনুপস্থিতি অনুভব করলেও আজকের দিনটা যেন তাঁর স্মৃতির সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে থাকতে চান স্বস্তিকা। তাই এপার থেকেই ওপারে বাবাকে খোলা চিঠি লিখলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সে চিঠিতে যেমন মিশে রয়েছে খানিক বিষাদের সুর, খানিক বাবার প্রতি সন্তানের আকুতি আর এক পাহাড় ভালবাসা।
“হ্যাপি বার্থডে বাবা। কোথায় আছো সে তো জানিনা, কে আলমারি থেকে নতুন জামা বের করে জোর করে পরিয়ে দেবে তাও জানিনা। আশা করি কেউ নিশ্চয়ই আছে, আমার মতন করে তোমায় আগলে রেখেছে। প্রতি বছরের মতন, এবারেও নতুন ফতুয়া-লুঙ্গি পরো। খাদির দোকানে গেলে, গেরুয়া রং এর কোনও কাপড় দেখলেই মনে হয় তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবি বানাতে দি, তার পর মুহূর্তেই মনে পড়ে তুমি তো নেই। আজ সন্ধে নামলে দু’পাত্তর ব্যালেন্টাইন খেও। কত ভালবাসতে। পৃথিবীর এত জায়গায় যাই, যত ভালো স্কচই কিনে আনি না কেন সেই ব্যালেন্টাইনটাই সেরা। তোমার আর মা-এর না থাকাতে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া, লোকজন এর আসা যাওয়া, আনন্দ উৎসব প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। ঠিক ওই গান টার মতন - এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া। ১৩ ই জানুয়ারি- এই দিনটা আমার কাছে আজীবন “আমার বাবার জন্মদিন” হয়েই রয়ে যাবে। অবশ্য শুধু একটা দিন কেন? বাকি বছরের অজস্র দিনগুলো ও তোমাদের দুজনের দিন হয়েই রয়ে গেছে। জন্মদিন, বেড়াতে যাওয়ার দিন, অসুখ করার দিন, হাসপাতালে যাওয়ার দিন, সেখান থেকে ফেরার দিন, না ফেরার দিন এইসব।”
“জীবনটাই দু’টো টাইমলাইন এ বিভক্ত -
তখনও মা ছিল, তখন আর মা ছিল না। তখনও বাবা ছিল, তখন বাবা ছিল না। আর কটা দিন থেকে গেলে পারতে বাবা - না হয় অনেক রাত অব্দি জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে, লোকজন এর গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে দু পেগ হুইস্কি খাওয়ার জন্যই রয়ে যেতে। না হয়, ব্রাজিল - আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে চিৎকার করার জন্য রয়ে যেতে। না হয়, দরবেশ, ক্ষীরকদম্ব, মনোহরা, সীতাভোগদের জন্যয রয়ে যেতে। ভাত রুটির শেষ পাতে রোজ একটু মিষ্টি খাওয়ার পাটও চুকে গেছে। বাড়িতে আর মিষ্টি কেনা হয় না। তোমায় আর একবার দেখার জন্য সব করতে পারি বাবা। তুমি তো ঈশ্বরের কাছে আছো, তুমি ওনাকে বোলো, এই জন্মে হোক বা পরের জন্মে, বা দু’জন্মের সন্ধিক্ষণে আমাদের দেখা টা যেন হয়। কত কথা জমে আছে বাবা। এক পাহাড়।”
“আজ তোমার ফেভারিট ব্রুট পারফিউমটা মেখেছি, তোমার জন্মদিনে তোমার গায়ের গন্ধ থাকুক গায়ে। রোজ ঘুমোতে গেলে ভাবি, চোখ খুললেই হঠাৎ যদি তোমায় দেখতে পাই, জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো, অনেকক্ষণ।”
“বেশি কিছু চাই না, এই টুকুই। কখনও এলে ভেবলি বলে ডেকো বাবা, ঠিক বুঝে নেব তুমি ডেকেছ। ভাল থেকো - তোমার পথে ঝলমলে আলো থাক, ইউডি কোলনের গন্ধ থাক, অনেকটা যত্ন আর ভালোবাসা থাক। আমার কাছে অপেক্ষা থাক, আমার সারাক্ষণের সঙ্গী।”
