বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা বিনোদ খান্না— খ্যাতি, অর্থ, গ্ল্যামারের শীর্ষে থেকেও হঠাৎ সবকিছু ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে হাঁটলেন। আশ্রয় নিলেন বিতর্কিত স্বঘোষিত ধর্মগুরু ওশোর, যিনি তখন ভগবান রাজনীশ নামে পরিচিত। দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ শিষ্য পুণেতে তাঁর আশ্রমে জীবনের পাঠ নিতেন। আশ্রমে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং শিষ্যদের মধ্যে অবাধ মিলনের মানসিকতা জাগরণের জন্য তিনি সারা বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ‘সেক্স গুরু’। অভিনেতার পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু বিনোদেরও যে শান্তি মেলেনি, তা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আনলেন ওশোর ভাই স্বামী শৈলেন্দ্র সরস্বতী।
‘সফল মানুষ সব দিক থেকে সফল— এটা ভুল ধারণা’ মন্তব্য ওশোর বিয়ের। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শৈলেন্দ্র জানান, ওশোর আশ্রমে থাকার সময় তিনি বিনোদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। বাইরে থেকে সাফল্যের প্রতীক মনে হলেও, ভেতরে ভেতরে বিনোদ ছিলেন অসুরক্ষিত আর মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন। প্রায়ই নাকি কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি।

স্বামী শৈলেন্দ্র সরস্বতীর দাবি, একদিন ওশো তাঁকে প্রশ্ন করেন, কেন মন খারাপ? বিনোদের উত্তর ছিল — তিনি স্ত্রী-সন্তানদের ভীষণ মিস করছেন। কিন্তু ওশো বুঝে ফেলেন, আসল কারণ অন্য। শৈলেন্দ্রের দাবি, ওশো তখন বিনোদকে সোজাসুজি বলেন— “তুমি তোমার স্ত্রী-সন্তানকে নয়, অমিতাভ বচ্চনের প্রতি ঈর্ষায় কষ্ট পাচ্ছো।”
সেই সময় অমিতাভ ছিলেন বিনোদের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। বিনোদ যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন অমিতাভ সাংসদ হয়ে উঠেছেন, আর সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তায় পৌঁছে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ওশোর মতে, অবচেতনে এই তুলনা বিনোদকে পোড়াচ্ছিল। এমনকি তিনি মজার ছলে পরামর্শ দেন— “ঈর্ষা দূর করতে চাইলে, বিরোধী দলে যোগ দাও আর অমিতাভের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াও।” প্রথমে বিনোদ এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, শৈলেন্দ্রর মতে ওশোর কথায় শেষমেশ তিনি ভেঙে পড়েন। পরে বুঝতে পারেন, নিজের ‘পরিবারকে মিস করা’ আসলে ছিল ভেতরের গভীর আঘাতকে আড়াল করার বাহানা।
এরপর বিনোদের ভারতে ফেরা, নতুন পরিবার আর শুরু হয় নতুন জীবন। আশ্রম জীবন শেষে বিনোদ ভারতে ফিরে এলেও, নিজের পরিবারের সঙ্গে আর যুক্ত হননি। বরং নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গড়ে তোলেন নতুন সংসার। নব্বইয়ের দশকে তিনি ফের বলিউডে সক্রিয় হন, একের পর এক বক্স অফিস সফল ছবি উপহার দেন। শুধু তা-ই নয়, বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতিতেও হাত পাকিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদে আসীন হন। অন্যদিকে, অমিতাভ বজায় রাখেন কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।
বছর পেরিয়ে গেলেও, বিনোদ খন্নার জীবনের এই অধ্যায় এখনও বলিউডের অন্যতম বিতর্কিত গল্প— যেখানে সেলুলয়েডের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ঈর্ষা, অস্থিরতা আর নিজের সত্যি চেনার দীর্ঘ পথযাত্রা।
সম্প্রতি এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বিনোদ খান্নার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অজানা দিক প্রকাশ করেছেন তাঁর পুত্র তথা জনপ্রিয় অভিনেতা অক্ষয় খান্না। অকপটে জানালেন কেন তিনি তাঁর বাবা বিনোদ খান্নার সঙ্গে ‘হিমালয় পুত্র’র পর আর কাজ করতে চাননি। অক্ষয় খন্নার প্রথম ছবি ‘হিমালয় পুত্র’ (১৯৯৭) ছিল বিনোদ খান্নার সঙ্গে তাঁর প্রথম এবং একমাত্র কাজ। কিন্তু এরপর আর কখনও তাঁদের একসঙ্গে পর্দায় দেখা যায়নি। সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে অক্ষয় বলেছেন, “বাবার সঙ্গে কাজ করা ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। কিছু মানুষ আছে, যাঁদের সঙ্গে কাজ করলে সহ অভিনেতা হিসাবে আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যায়। আমার বাবা ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং অমিতাভ বচ্চন আরেকজন।” অক্ষয়ের কথায়, “বাবার স্ক্রিন প্রেজেন্স এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তাঁর সামনে দাঁড়ানো ভীষণ, ভীষণ কঠিন ছিল। এমন কিছু অভিনেতা আছেন যাঁদের উপস্থিতি আপনার পুরো মনোযোগ টেনে নিয়ে যায়। আমার বাবার মধ্যে সেই ব্যাপারটা ছিল, কিন্তু আমার সেটা নেই। এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে দাঁড়ানো সত্যিই কঠিন। ফলে, বুঝতেই পারছেন...।”
এছাড়া, অক্ষয় আরও জানান যে তাঁর বাবার মতো স্টাইল আইকন এবং খ্যাতিমান অভিনেতার পাশে কাজ করা এমনিতেও তাঁর জন্য কখনওই সহজ ছিল না। বিনোদ খান্নার মৃত্যুর পরেও তাঁর ক্যারিশ্মা এবং অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা অক্ষয় তীব্রভাবে অনুভব করেন। অক্ষয় তাঁর বাবার আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতিও সম্মান জানিয়েছেন।
