একসময় টলিপাড়ার জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার এন কে সলিল। যিনি মিঠুনের ১৬টি বক্স-অফিস সফল ছবির গল্প-চিত্রনাট্যকার। একটা সময় মিঠুনের মুখে গরমা গরম সংলাপ মানেই ছিল তা সলিলের লেখা! বিশেষ করে 'এম এল এ ফাটাকেষ্ট'-র জনপ্রিয় সব সংলাপ তো জায়গা করে নিয়েছে বাংলা ছবির ইতিহাসে। তবে জানেন কি, তাঁর লেখা সংলাপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি সংলাপ লিখেছিলেন খোদ সলমন খান! শুধু তাই নয়, সে সংলাপ আবার বড়পর্দায় শোনা গিয়েছিল সলমনেরই মুখে। আর এই দাবি, অন্য কেউ নয় করলেন খোদ এন কে সলিল! শুনল আজকাল ডট ইন।
“সেটা ২০১০ সাল। আমিও এই ব্যাপারটা জানতাম না। আমাকে সলমনের টিমের তরফে আগে থেকে কেউ জানানওনি। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম সলমনের ‘বীর’ ছবির ট্রেলার মুক্তির পরে। আমি মিঠুনদার চিতা ছবির চিত্রনাট্যকার। সে ছবিতে মিঠুনদার জন্য একটা সংলাপ লিখেছিলাম, ‘সাপের ছোবল আর চিতার খাবল যেখানে পড়বে, আড়াই কেজি মাংস তুলে নেবে!’ এবার হল কী, বীর ছবিতেও সলমনের মুখে প্রায় এইরকমই একটি সংলাপ রয়েছে। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘যেখানে থাবা মারব, পাঁচ কেজি মাংস তুলে আনব!’”
সামান্য থেমে ‘জাত গোখরো’ সংলাপ খ্যাত এই চিত্রনাট্যকার হাসতে হাসতে আরও বললেন, “প্রথমে তো চমকে গিয়েছিলাম! কোথায় আমি, কোথায় সলমন খান। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম, এটা নিশ্চিতভাবে মিঠুনদার কাজ। বীর ছবিতেও তো মিঠুনদা অভিনয় করেছিলেন। সলমনের বাবার চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আমি নিশ্চিত, চিত্রনাট্যের আবহ বুঝে এই সংলাপটা মিঠুনদা সলমনকে ব্যবহার করার বুদ্ধি দিয়েছেন। আর সলমনের মনে ধরাতে তিনি একটু এদিক-ওদিক করে চালিয়ে দিয়েছেন সংলাপটা। ঠিক আছে, মন্দ কী!”

অন্যদিকে, কিছুদিন আগে আজকাল ডট ইন-কে এন কে সলিল আরও জানিয়েছিলেন ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মিঠুন। এবং তা বাংলা ভাষায়! সেই ছবির গল্প-চিত্রনাট্যের দায়িত্ব নাকি মিঠুন দিতে চেয়েছিলেন তাঁকেই। তাঁর কথায়, “মাস কয়েক আগে মিঠুনদা কলকাতায় এসেছিলেন। ওঁর সঙ্গে ছিলেন পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ও-ই আমাকে ফোন করে বলে যে ‘দাদা তোমায় খুঁজছে, এসো।’ শুনে গেলাম। কলকাতায় এলে রাজারহাটে একটি নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে ওঠেন মিঠুনদা। সেখানেই গেলাম। দেখা হতেই, জড়িয়ে ধরলেন। বাড়ির সবার খোঁজ খবর নিলেন। তারপর জানালেন যে তিনি একটি ছবি করতে চান। যেরকম বাংলা ছবি উনি আর আমি করে এসেছেন। প্রতিবাদী চরিত্র, অ্যাকশন থাকবে। এত পর্যন্ত সমস্যা ছিল না। তবে তারপরেই মিঠুনদা বললেন এ ছবির মূল গল্প হবে বাংলায় যে যে বিষয় নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে এবং যা যা বিচারাধীনও বটে। যেমন - গরু পাচার, কয়লা চুরি, নিয়োগ দুর্নীতি, চাকরি দুর্নীতি... সঙ্গে আরও বহু স্ক্যাম...এসব আর কী! সব শুনে আমার কোথাও মনে হয়েছিল এই ছবিটা বিজেপির ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি হতে পারে। কারণ মিঠুনদা এখন একটি বিজেপি দলের নেতা। কোনও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ছবি করাটা ঠিক নয়, আমার মতে। আর তাছাড়া দেখুন, আমি একজন শিল্পী, কখনওই চাইনি কোনও রাজনৈতিক দলের ছায়ায় আমার নাম আসুক। তাই আমি কোনও ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবির অংশ হব না! সেইজন্য ভদ্রভাবে পথিকৃৎকে জানিয়ে দিয়েছিলাম এই ছবি করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।”
