নিজস্ব সংবাদদাতা: ৭৫-এ মিঠুন চক্রবর্তী। বিতর্ক, কটাক্ষ পেরিয়ে আজও বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। প্রিয় অভিনেতা তো বটেই। এদিন তাঁর জন্মদিনে 'প্রিয় নায়ক'কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নানান অজানা ঘটনা তুলে ধরলেন একসময় টলিপাড়ার জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার এন কে সলিল। শুনল আজকাল ডট ইন।
“মিঠুনদার সঙ্গে টানা ১৬টা ছবিতে কাজ করেছি। ‘বারুদ’ থেকে শুরু, তারপর ‘যুদ্ধ’, ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’, ‘হাঙ্গামা’…কত বলব! একসময় মিঠুন-এন কে সলিলের জুটি মানেই নিশ্চিন্তের শ্বাস ছাড়তেন প্রযোজকেরা, অন্যদিকে উত্তেজনায় ফুটতেন দর্শকেরা। মিঠুনদার সঙ্গে প্রথম আলাপে উনি শুধু আমাকে বলেছিলেন, ‘যেভাবে, যে ছন্দে হিন্দি ছবিতে আমি সংলাপ বলি, দর্শক যেভাবে আমাকে দেখে অভ্যস্ত ওরকম সংলাপ-ই বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে বলতে চাই। বাকিটা তুমি বুঝে নাও, কী করবে।’ ব্যাস! মিঠুনদাকে স্টাডি করার শুরু করলাম। ওঁর অভিনীত সব হিন্দি ছবি টানা দেখা থেকে ওঁর সঙ্গে মেলামেশা, ওঁকে কাছ থেকে দেখা। মিঠুনদা আমার লেখা সংলাপ খুব পছন্দ করতেন। আমিও চাইতাম, আমার লেখা সেরা সব সংলাপ যেন মিঠুনদার মুখ থেকেই ডেলিভারি হয়।”
“টানা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর ওঁর ছায়াসঙ্গী ছিলাম। কলকাতা, হায়দরাবাদ, উটি, চেন্নাই -যেখানে বাংলা ছবির শুটিংয়ে উনি, সেখানেই আমি। আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন। তাই বলে কী ঝামেলা হয়নি ওঁর সঙ্গে? খুব হয়েছে। ধরুন, মিঠুনদা বলছেন দৃশ্যটা বদলাতে হবে, সংলাপ বদলাতে হবে আর এদিকে আমি বলছি না। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি চলছে, গলার আওয়াজও চড়ছে। শেষমেশ মিঠুনদা যখন বুঝতেন আমার যুক্তি ঠিক, হেসে মেনে নিতেন। এতটুকুও রাগ করতেন না। বড় মন না হলে এমন হওয়া যায় না। আর সেইজন্যই তিনি এতবড় শিল্পী। ওঁর সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে যে দৃশ্যে পর্দাভাগ করেন, কীভাবে যে উনি সাহায্য করেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। সেসব মিটলে মিঠুনদার অন্য রূপ। সারাক্ষণ ইয়ার্কি, ফাজলামো। এর পিছনে লাগছে, ওর পিছনে লাগছে। ভীষণ দুষ্টু! আবার এই মানুষটাই আমাদের সঙ্গে পাত পেরে খাচ্ছে একসঙ্গে! ভাবতে পারেন? মিঠুন চক্রবর্তী এরকমই। শুটিংয়ের ইউনিটের মেম্বাররা যা খাবেন উনিও তাই-ই খেতেন। আবার রাত্রেবেলা নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতেন আমাদের। আহা! কী অপূর্ব স্বাদ ছিল রান্না করা পদের।”
 
 “একটা কথা বলি, মিঠুনদা যে বাংলা ছবিতে কাজ করতেন তখন, স্রেফ বাংলা ভাষাকে ভালবাসেন বলে। উনি বছরে তিনটি ছবি করলে এবং তা জনপ্রিয় হলে বহু মানুষের রোজগার হবে, তাই করতেন। বলিউডের এক নম্বর তারকা যখন ছিলেন, তখনও বাংলা ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন। আজও মুম্বইয়ে মিঠুনদা মানে বিরাট নাম। কিন্তু ওঁর মন কিন্তু গেঁথে রয়েছে এই বাংলাতেই।”  
 
 “ফ্লার্ট কী করতেন না? করতেন নায়িকা, ছোটখাটো অভিনেত্রীদের সঙ্গেও। তবে ওই ওটুকুই। স্রেফ মজা, কাউকে দুঃখ না দিয়ে। মিঠুনদার ভালবাসা কিন্তু একজনই - যোগিতা বালি। ছেলেমেয়েরা মিঠুনদার অন্তঃপ্রাণ। বিশেষ করে ওঁর মেয়ে। যাই হোক, ফিরি মিঠুনদার সংলাপে , ওই যে ‘মারব এখানে...’, ‘...জাত গোখরো’ এসব সংলাপ ভীষণ প্রিয় মিঠুনদার। মাঝেমধ্যেই আড্ডা মারতে মারতেই আউড়াতেন আর হাসতেন। আসলে, মিঠুনদা বড় সহজ। মানুষকে বিশ্বাস করেন চটজলদি। তাতে ঠকেছেন, কষ্ট পেয়েছেন। তবে বিতর্ককে পাত্তা-ই দেন না মিঠুনদা। বলা ভাল, কেয়ারই করেন না!”  
“আর একটা কথা, মিঠুনদার কিন্তু মূলধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে ফিরে আসা উচিত। অবশ্যই উচিত। এবং সেটা উনি নিজেও মানেন। তবে অবশ্যই ওঁর বয়সোচিত চরিত্রে। আমার সঙ্গে মাঝেমাঝেই এই বিষয়ে কথা হয়। ভাল চিত্রনাট্য পেলে উনি ওঁর প্রিয় ঘরানার ছবিতে ফিরবেন। ফিরবেন-ই! জন্মদিনে মিঠুনদাকে অনেক শুভেচ্ছা। আজও ওঁকে ভীষণ ভালবাসি।”
