পৃথিবীটা ছোট হতে হতে এসে নাকি ঠেকবে দক্ষিণ কলকাতার ডাবিং স্টুডিওয়। দস্তুর এমনই যে, ফের হয়তো মুখোমুখি হতে হবে বঙ্গ রাজনীতির দুই প্রতিপক্ষ কুণাল ঘোষ এবং মিঠুন চক্রবর্তীকে । রাজনৈতিক ময়দান নয়, এই সাক্ষাৎ সেলুলয়েডের ময়দানে।
রবিবার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের এক স্টুডিওয় ভিতরে যখন সাজো সাজো রব বাইরে তখন সন্নাটা। বেলা বারোটায় ওই স্টুডিওর ভিতরের চিত্রনাট্য সাজানো হয়ে গিয়েছে। এখনও অবধি যা ঠিক আছে তা যদি বাস্তবায়িত হয়, ডাবিং হবে টলিউডের দুই আসন্ন ছবি ‘প্রজাপতি ২’ এবং ‘কর্পূর’-এর। অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি’-তে দেবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন মিঠুন। সিক্যুয়েলেও অভিনয় করবেন অধুনা বিজেপি-র সদস্য। ডাবিংয়ের জন্য ইতিমধ্যেই মুম্বই থেকে উড়ে এসেছেন কলকাতায়। একই দিনে একই সময়ে অরিন্দম শীল পরিচালিত ছবিটির জন্য ডাবিং করার কথা কুণালেরও। অর্থাৎ রবিবাসরীয় দুপুরে একই স্থানে বিরাজ করবেন পদ্ম এবং ঘাসফুল শিবিরের দুই সদস্য। রবি ঠাকুরের কবিতার মতো ট্রেনের কামরা না হোক, খাস কলকাতায় ডাবিং স্টুডিওয় কি ‘হঠাৎ দেখা’ হয়ে যেতে পারে কয়েক মাস আগে আইনি বিবাদে জড়ানো দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের?
সূত্র বলছে, কাজের সময় দু’জনের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। একই স্টুডিওর আলাদা জায়গায় ডাবিং করবেন যে যাঁর মতো। তবে মধ্যাহ্নভোজের সময় সেই অদৃশ্য সীমারেখা মুছে গেলেও যেতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ সেই স্টুডিওর সব শিল্পীরা নাকি একই জায়গায় বসে আড্ডা সহযোগে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সারেন। সেক্ষেত্রে, কুণালের বিরুদ্ধে ১০০ কোটির মানহানি মামলা করা মিঠুন কি এবার একই পথে হাঁটবেন? বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে কুণালও কি অগ্রজ অভিনেতার সঙ্গে এক সহজ-স্বাভাবিক আড্ডায় মেতে উঠবেন? আবার অনেকেরই ধারণা, দু’জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বা মুখোমুখি সংঘাত এড়াতে ডাবিংয়ের সময়সূচি শেষ মুহূর্তে বদলে দেওয়া হতে পারে।
সেপ্টেম্বরের মাসের কথা। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। কুণালের এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই এই মামলা করেন তিনি। পদ্মভূষণ জয়ীর অভিযোগ, নিছকই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে মিথ্যা এবং কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন কুণাল। এর আগে মিঠুন ওই মন্তব্যের জন্য কুণালকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর আবেদন অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁকে ১০০ কোটি টাকা প্রদান করা হোক এবং ভবিষ্যতে কুণালকে এমন ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিক আদালত। কুণালও চুপ থাকেননি। পাল্টা দিয়ে তিনিও বলেছিলেন, ‘কোর্টে দেখা হবে’।
দেড় মাস আগের সেই তিক্ততার পর ফের একই জায়গায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজনৈতিক রেষারেষি ভুলে কি শিল্পের স্বার্থে এবার মুখোমুখি হবেন দুই শিল্পী? নাকি বজায় থাকবে আইনি সংঘাতের উত্তাপ? প্রশ্ন এখন সেটাই।
