মার্ভেল স্টুডিওজ আবারও প্রমাণ করতে চলেছে, ব্লকবাস্টার বানানো শুধু পর্দার লড়াই নয়, এটা একেবারে নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত একটি মার্কেটিং যুদ্ধ। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’-র ক্ষেত্রে ঠিক সেই কারণেই স্টুডিও ফের হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের সবচেয়ে সফল অস্ত্র- ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ ফর্মুলা!
এই কৌশলের কেন্দ্রে রয়েছে ছবির প্রথম ট্রেলার মুক্তির সময় নির্বাচন। মনে করা হচ্ছে, ‘ডুমসডে’-র প্রথম ট্রেলার নামবে ঠিক এই ছুটির মরশুমেই- ডিসেম্বরে। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ‘এন্ডগেম’-এর প্রথম ট্রেলার, যা ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ভিউয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল। সেই ঐতিহাসিক সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতেই এবার একই সময়সীমা বেছে নিচ্ছে মার্ভেল।
এই স্ট্র্যাটেজিকে আরও তীক্ষ্ণ করেছে আরেকটি বড় সংযোগ। খবর, ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’-র প্রথম ঝলক দেখানো হবে জেমস ক্যামেরনের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘অবতার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এর আগে। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫। অর্থাৎ, ডিজনির ছুটির মরশুমের সবচেয়ে বড় ছবিই হয়ে উঠবে মার্ভেলের ফেজ সিক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবির প্রচারের মঞ্চ।
এর ফল? ‘অবতার’-এর জন্য কাটা প্রতিটি টিকিটই রূপ নেবে ‘ডুমসডে’ ট্রেলার দেখার সুযোগে। মাল্টিভার্স সাগার সবচেয়ে বড় ছবিকে দর্শকের সামনে আনার জন্য এর চেয়ে পাকা কৌশল আর কীই বা হতে পারে!
অবশ্য, অন্য কোনও বড় ছবির সঙ্গে মার্ভেলের ট্রেলার জুড়ে দেওয়া নতুন কিছু নয়। আগেও একাধিকবার এই কৌশল ব্যবহার করেছে স্টুডিও। ২০১৭ সালে ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ২’-এর সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘থর: র্যা গনারক’-এর প্রথম ঝলক। একই বছর ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর ট্রেলার মুক্তি পায় এনবিএ ফাইনাল চলাকালীন, যাতে ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি চ্যানেলের বিশাল ক্রীড়াপ্রেমী দর্শককে কাজে লাগানো যায়। আবার ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’-এর পোস্ট-ক্রেডিটে দেখা গিয়েছিল ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেস’-এর প্রথম টিজার।
তবে ‘ডুমসডে’-র ক্ষেত্রে মার্ভেল শুধু পুরনো সাফল্য ধার করছে না, একটি বড় রীতিও ভেঙেছে। ডিসেম্বর ২০২৫-এ মুক্তি পেতে চলা ট্রেলারটি একটি ১৪ বছরের এমসিইউ ঐতিহ্য ভাঙতে চলেছে। ছবিটি মুক্তি পাবে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৬। অর্থাৎ, ট্রেলার আসছে প্রায় এক বছর আগে।

এটাই প্রথমবার, কোনও অ্যাভেঞ্জার্স ছবির ট্রেলার এত আগেভাগে নামছে। তুলনা করলে দেখা যাবে ‘এজ অফ আলট্রন’, ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ এবং ‘এন্ডগেম’ এই তিনটি ছবিরই প্রথম ট্রেলার মুক্তি পেয়েছিল ছবির মুক্তির ২০০ দিনেরও কম সময় আগে। সেখানে ‘ডুমসডে’ ট্রেলার আসছে প্রায় ৩৬৫ দিন আগে।এর মাধ্যমে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে মার্ভেল, ফেজ সিক্সের এই ছবিকে ঘিরেই তাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদি হাইপ ওঠানোর পরিকল্পনা।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, এই ট্রেলার আসছে পরবর্তী এমসিইউ ছবি ‘স্পাইডার-ম্যান: ব্র্যান্ড নিউ ডে’-এর আগেই। স্পাইডার-ম্যান ছবিটির মুক্তি নির্ধারিত ৩১ জুলাই, ২০২৬। অর্থাৎ, স্পাইডার-ম্যানের আগে দর্শক পেয়ে যাবে ফেজ সিক্স ফিনালের প্রথম অফিসিয়াল ঝলক, যা মার্ভেলের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এই সব আয়োজনের মাঝেই প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। শোনা যাচ্ছে, মার্ভেল নাকি ইতিমধ্যেই ৩০টিরও বেশি আলাদা ট্রেলার কাট তৈরি করেছে ‘ডুমসডে’-র জন্য। কারণ এই ছবিটাই সাম্প্রতিক বক্স অফিস ধাক্কার পর মার্ভেল ব্র্যান্ডের ওপর দর্শকের আস্থা ফেরানোর সেরা হাতিয়ার।এই ট্রেলার শুধু হাইপ তৈরির হাতিয়ার নয়, দর্শকের কাছে এটা একরকম মার্ভেলের বিশ্বাস পুনর্গঠনের অস্ত্র।

‘ডুমসডে’-তে দেখা যাবে বিশাল স্টার-কাস্ট। থাকবেন পৃথিবীর সেরা সুপারহিরোরা, পাশাপাশি প্রথমবার বড়ভাবে যুক্ত হবেন ফ্যান্টাস্টিক ফোর এবং এক্স-মেন। তাই ট্রেলারে মাল্টিভার্স জুড়ে এক অভূতপূর্ব মহামিলনের ইঙ্গিত থাকাই স্বাভাবিক।
আর ছবির কেন্দ্রে যেহেতু আছেন ভিলেন, তাই ট্রেলারের মূল ফোকাস থাকছে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের ডক্টর ডুম-এর ওপর। ল্যাটভেরিয়ার এই শাসকের ভয়ংকর পরিকল্পনাই কেন এক অসম্ভব জোটকে একত্রিত করতে বাধ্য করবে সেই বার্তাই ট্রেলারে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাইবে মার্ভেল।
সব মিলিয়ে, ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’-র ট্রেলার শুধু একটি প্রোমো নয়, এটি মার্ভেলের পরবর্তী এক যুগের দিকনির্দেশ। আর সেই যুদ্ধের প্রথম শট নামতে চলেছে, ডিসেম্বরেই।
