এক মঞ্চে ফের দেব আর কুণাল ঘোষ—তৃণমূলের দুই মুখ, একসময়ে যাঁদের ঠান্ডা লড়াই নিয়ে সরগরম ছিল ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহল। তবে এবার দুই সতীর্থর স্বাক্ষাৎ কোনও রাজনীতির আসরে নয়, বরং রুপোলি পর্দার পেশাদারদের বিজয়া সম্মেলন—ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ফেডারেশন অব সিনেমা টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্সের আয়োজনে। মঞ্চে মিলতেই শুরু হালকা খুনসুটি। দেবকে দেখে কুণালের রসিক মন্তব্য, “দেবের পিছনে লাগি, কারণ লাগার জন্যও তো একটা ভাল পিছন চাই!” তাঁর এই মন্তব্যে মুহূর্তেই হাসির রোল উঠল সভায়। বিতর্ক নয়, আজ কেবলই রসিকতায় মজল তৃণমূলের দুই সহযোদ্ধা।
দেব-কুণালের ঠান্ডা লড়াইয়ের শুরু পুজোর মরশুমেই। সেই সময় মুক্তি পেয়েছিল টলিউডের চারটি বড় বাজেটের ছবি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির একাংশের দাবি, প্রভাব খাটিয়ে নিজের ছবি ‘রঘু ডাকাত’-এর জন্য অতিরিক্ত প্রেক্ষাগৃহ ও বিশেষ শো-টাইম নিশ্চিত করেছিলেন অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাকি তিনটি ছবি — ‘রক্তবীজ ২’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। গুঞ্জন, সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন দলেরই মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন— প্রতিযোগিতা যখন চারটি ছবির, তবে একটিই বা এত বাড়তি সুবিধা পায় কেন?
বিতর্ক পেরিয়ে এখন সৌজন্যের হাত ধরেই এগোচ্ছেন দেব ও কুণাল। তিক্ততা নয়, বরং সহযোগিতার আবহেই দেখা গেল দুই তৃণমূল সতীর্থকে। ট্রেলার লঞ্চের মাধ্যমে এক শুভ কাজের শুভ সূচনা করেছিল ‘রঘু ডাকাত’ টিম। ৪৯ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দর্শক দেখতে পেয়েছিলেন ছবির ট্রেলার লঞ্চ। কথা ছিল, টাকা পুরোটাই যাবে টেকনিশিয়ান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে। এই টাকাটা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবেন তাঁরা। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে চার লক্ষেরও বেশি টাকা তুলে দেওয়া হলে তাঁদের উদ্দেশ্যে। দেব এবং শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন সকলেই।
বিজয়া সম্মেলনে এসে আপ্লুত দেব। তাঁর কথায়, “ফেডারেশন আমাদের পরিবার। আর আমরা সেই পরিবারেরই একটা অংশ। সারা বছর কলাকুশলীরা পরিশ্রম করেন। আমার মনে হয় এরকম একটা অনুষ্ঠান দরকার। স্বরূপদা (ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস) এবং যাঁরা এই অনুষ্ঠানের কথা ভেবেছেন, তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম একটা দিন আমাদেরও দরকার। যেখানে আড্ডা হবে। আলোচনা হবে।”
ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ জানান, কলাকুশলীদের সুবিধার জন্য মেডিক্লেম-সহ আরও অন্যান্য সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে খুশি দেব। তাঁর কথায়, “ভবিষ্যতে আমরা যেন আরও টেকনিশিয়ানদের এই সুযোগসুবিধার আওতায় আনতে পারি, এটাই আশা করব। যাঁরা অবসর নিয়েছেন, বাড়িতে বসে আছেন, তাঁদের জন্য যদি আমরা সবাই মিলে কিছু করতে পারি, সেই চেষ্টাই করব। প্রযোজকদের কাছেও অনুরোধ থাকবে তাঁরা যাতে এগিয়ে আসেন।”
