আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোয় বাংলা ছবির মুক্তি ঘিরে তুঙ্গে তরজা! টলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে- ‘রঘু ডাকাত’, ‘রক্তবীজ ২’, ‘দেবী চৌধুরানী’ এবং ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’- এই চতুর্মুখী লড়াই শুরু হওয়ার আগেই নাকি ফ্রন্টফুটে দেবের ‘রঘু ডাকাত’। নেপথ্যে বেশি হল এবং বেশি শো। আর এই নিয়েই চলছে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ছবির পরিচালক প্রযোজক তো ছিলেনই, এবার সেই দ্বন্দ্বে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের।
এদিন সকালেই নিজের ফেসবুক পোস্টে কুণাল লেখেন, “টলিউডে চুক্তিভঙ্গের ইঙ্গিত। বাংলার সিনেমার স্বার্থে ঠিক হয়েছিল পুজোয় আসা সবকটি ছবি প্রথমে সমান সুযোগ পাবে। তারপর দর্শকের সাড়া অনুযায়ী বা ব্যবসা অনুযায়ী হল মালিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু, যা খবর, ‘প্রভাবশালী’ একটি ছবি বাড়তি শো পাচ্ছে একাধিক হলে শুরু থেকেই। ‘রক্তবীজ ২’র মত প্রথম পর্ব সুপারহিট হওয়া ছবিকেও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গোড়া থেকে। এটা কাম্য নয়। শুরুটা সবাই সমান সুযোগ পাক। তারপর দর্শকের বিচার। সেটা না হলে এত বৈঠকের মানে কী? যাঁরা বৈঠক করেছিলেন, তাঁরা এখন কী করছেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে নজর দিন। হল মালিকরাও বিষয়টায় নিরপেক্ষতা রাখুন। চারটি সিনেমা, রক্তবীজ টু, রঘু ডাকাত, দেবী চৌধুরানী, যত কান্ড কলকাতাতেই সমান সুযোগ পাক আত্মপ্রকাশে, তারপর দর্শকের বিচারে দৌড় চলুক। একটা ছবি নেপথ্য প্রভাবে শুরুর দিন থেকে বাড়তি শো পাবে, এসব হলে তার প্রতিবাদও হবে।” কুণাল ঘোষ নিজের লেখাটিকে ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পোস্ট’ বললেও তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। ‘বাংলা ছবির একজন দর্শক হিসেবে’ তিনি এই কথা লিখেছেন। এমনই দাবি করেন তৃণমূল নেতা।
কুণালের মন্তব্য ভাইরাল হতেই পাল্টা তোপ দাগেন প্রযোজক রানা সরকার। কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই রানা নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “দেব বিরোধী কেন কুনাল ঘোষ? রঘু ডাকাতের পেছনে লাগছে কেন কুনাল ঘোষ? বাংলা সিনেমা নিয়ে এখন এত কথা কেন বলেন কুনাল ঘোষ? কুনাল ঘোষের পেছনে টলিউডের কোন প্রোডাকশন হাউস ? ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে কুনাল ঘোষের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে কথা বলা কি কোনো দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোক হিসেবে না, একজন সাধারণ রাজনৈতিক সচেতন বাঙালি হিসেবে আমার এই প্রশ্ন।” এখানেই থেমে থাকেননি ধূমকেতুর প্রযোজক। তৃণমূল নেতাকে একহাত নিয়ে পরবর্তী পোস্টে লেখেন, “কুনাল বাবু রিপ্লাই দিলে জানাবেন কেউ, আমি ওনার পেজ ফলো করিনা…”
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
স্বাভাবিক ভাবেই রানা সরকারের মন্তব্যে ঘি পড়ে বিতর্কের আগুনে। এবার “রানা সরকার শুনছেন? আপনার সবকটি প্রশ্নের জবাব।” বলে রীতিমতো লম্বা পোস্ট করেন কুণাল। টলি প্রযোজককে পাল্টা আক্রমণ করে কুণাল লেখেন, “কুণাল ঘোষ নায়ক দেবের বিরোধী নয়। টেক্কার আগের ইন্টারভিউটা মনে আছে? কিন্তু যে বা যারা এই সরকারকে ফেলার প্রচার করছে, প্রতিবাদের নামে কুৎসা করছে, তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ২০২৬-এর আগে ছবি করা, সেটাও কি ইঙ্গিতবাহী? ওওও রানাবাবু, যে নায়িকা বাংলায় সন্তানের জন্ম দিতে লজ্জা পান, তাকে নিয়ে ছবির জন্ম দিয়ে কী বার্তা দিচ্ছেন? যে মিঠুনদা সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করছে, তাকে নিয়ে আদিখ্যেতা? কীসের ইঙ্গিত? আমি দেবকে পছন্দ করি কি না, দেব বুকে হাত রেখে বলুক। ওসব পর্ব আপনি জানেন না হয়ত। আমি ব্যক্তিগত বিষয় লিখতে চাই না।” অর্থাৎ টলিউডের ছবি মুক্তির লড়াই পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বাক্যবিনিময়ে গিয়ে দাঁড়ায়। কুণাল মনে করিয়ে দেন দেবের আগের ছবি ‘ধূমকেতু’ এবং রুক্মিণীর ‘বিনোদিনী’র প্রচারে নিজের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
রানার অভিযোগের জবাবে কুণাল লেখেন, “আমার পেছনে কেন প্রোডাকসন হাউস থাকবে? যখন টেক্কা বা খাদানের প্রশংসা করছিলাম, তখন তাহলে কারা ছিল? যখন কোনো সিনেমা, নাটককে দর্শকের কাছে তুলে ধরি, কে থাকে?? আমি আমার ভালোলাগা থেকে করি।” সবশেষে কুণাল এবারও দাবি করেন “পুজোয় চারটে সিনেমাই প্রথম সপ্তাহে সমান সুযোগ পাক। তারপর দর্শকের সাড়া অনুযায়ী হল মালিক সিদ্ধান্ত নিক।”
সব মিলিয়ে পুজোয় চারটি ছবি মুক্তি নিয়ে বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ আপাতত নেই। কিছুদিন আগেই বাংলা ছবির স্বার্থে হলগুলিতে বাংলা ছবি দেখানোর দাবিতে এককাট্টা হওয়া টলিপাড়ায় এখন ফের ফাটলের ইঙ্গিত। ছবি মুক্তিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সেই ফাটল আরও চওড়া হয়, নাকি মুক্তির আগেই সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসে সেটাই এখন দেখার।
