মা ও মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ সব পরিবারেই একটু অন্যরকম হয়। তবে অভিনেত্রী অপর্ণা সেন ও কঙ্কনা সেন শর্মার ক্ষেত্রে বিষয়টি যেন সত্যিই অন্যরকম। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কঙ্কনা ফাঁস করলেন তাঁর ছোটবেলার এক অজানা কাহিনী, যা শুনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। এক সময় ছোটরা যখন রবিবার সকাল মানেই টিভির সামনে 'রামায়ণ' বা 'মহাভারত' দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকত, কঙ্কনার বাড়িতে তখন দৃশ্যটা ছিল একেবারে আলাদা। অপর্ণা সেন নাকি ছোটবেলায় মেয়েকে এই জনপ্রিয় পৌরাণিক ধারাবাহিকগুলো দেখতেই দেননি!
ওই সাক্ষাৎকারে কঙ্কনা জানান, তাঁর মা মনে করতেন কোনও মহাকাব্যের সাথে প্রথম পরিচয়টা কখনওই অন্যের তৈরি করা দৃশ্যের মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়। অপর্ণা সেনের যুক্তি ছিল খুব স্পষ্ট— রাম বা অর্জুনের চেহারা কেমন হবে, সেটা যেন কঙ্কনা আগে নিজের কল্পনায় সাজিয়ে নিতে পারেন। কোনও সিরিয়ালের অভিনেতা বা সেট ডিজাইন যেন তাঁর কল্পনাশক্তিকে সীমাবদ্ধ করে না ফেলে।

এই কারণেই তিনি জেদ ধরেছিলেন যে কঙ্কনাকে আগে বই পড়ে এই মহাকাব্যগুলো জানতে হবে, তারপর তিনি টিভি দেখতে পারবেন। শুধুমাত্র রামায়ণ-মহাভারত নয়, অপর্ণা সেনের শাসনে বাদ পড়েছিল জনপ্রিয় আমেরিকান সোপ অপেরা 'বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল' বা 'সান্তা বারবারা'-ও।
সাক্ষাৎকারে কঙ্কনা রসিকতা করে বলেন, "মা চাইতেন আমি যেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা কাজগুলো দেখি আর নিজের স্বতন্ত্র রুচি তৈরি করি।" যদিও খুব অল্প কিছু বাণিজ্যিক সিনেমা যেমন 'মিস্টার ইন্ডিয়া' দেখার অনুমতি তিনি পেয়েছিলেন।
অভিনেত্রী জানান, মায়ের এই কঠোর শাসন কিন্তু তাঁর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, বরং আজকের এই ঋজু ও মেধাবী অভিনেত্রীকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। কঙ্কনার মতে, মায়ের এই সিদ্ধান্তের ফলেই তাঁর কল্পনাশক্তি আরও ধারালো হয়েছে। মা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই নিজের পছন্দের জায়গা গড়ে নেওয়ার জন্য জোর করেছেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর অভিনয় জীবনেও ছাপ ফেলেছে।
কঙ্কনার এই সাক্ষাৎকার অনুরাগীদের মনের প্রভাব ফেলেছে। নেটিজেনদের মতে, অপর্ণা সেন কেবল একজন জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক বা অভিনেত্রী নন, একজন মা হিসেবেও তিনি যে কতটা আধুনিক ও দূরদর্শী ছিলেন, কঙ্কনার এই স্মৃতিচারণ তারই প্রমাণ দেয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আট ঘণ্টা কাজের সময়ের প্রসঙ্গে কঙ্কনা বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও মানবিক কর্মঘণ্টা থাকা খুবই জরুরি। আমরা তো নিউরোসার্জন নই, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। সিনেমা বানানো অবশ্যই কঠিন কাজ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিসর্জন দিতে হবে। ”
তিনি আরও জানান, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায়ই দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শুটিং করেন। অনেক সময় টানা কয়েক সপ্তাহ ছুটি না পেয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এতে শারীরিক ক্লান্তির পাশাপাশি মানসিক চাপও ভয়ানকভাবে বেড়ে যায়। কঙ্কনার মতে, “এই আলোচনা কেবল আরামের জন্য নয়। এটি আসলে এমন এক কাজের পরিবেশ তৈরির দাবি যেখানে কর্মীরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবেন, সৃজনশীলভাবে আরও ভাল কাজ করতে পারবেন”
