ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে আফগানিস্তান দূতাবাসে তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠক করেন। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরেও তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।  ছয় দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ভারতে এসেছিলেন মুত্তাকি। শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তিনি। সেই বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের দেখা যায়নি বলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। উঠেছিল ‘লিঙ্গ বৈষম্য’র প্রশ্ন।তালিবান সরকারের মন্ত্রীর ভারতে আগমন এবং তাঁকে দেওয়া ‘রাজকীয় অভ্যর্থনা’ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার। শুধু তাই নয়, এক নিন্দুকের কটু মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গেলেন তিনি।

 

সম্প্রতি, আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারত সফরে এসে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি ছিল ২০২১ সালে তালিবান কাবুল দখল করার পর প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। মুত্তাকিরের দিল্লি সফরের সময় তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে  নারী সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার না-থাকা নিয়ে শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। পরবর্তীতে সেই বিতর্ক সামাল দিতে আরও এক প্রেস কনফারেন্স ডেকে ‘টেকনিক্যাল ইস্যু’ বলে ব্যাখ্যা দেন তালিবানি মন্ত্রী।

 

বরাবরই যে কোনও বিষয় নিয়ে স্পষ্ট মতামত দেন জাভেদ আখতার। এই ঘটনাতেই ফুঁসে ওঠেন জাভেদ আখতার। সমাজমাধ্যমে প্রথমে লেখেন, “লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে আমার। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সংগঠনের প্রতিনিধিকে যে অভ্যর্থনা জানানো হল, তা দেখে আমার লজ্জা লাগছে। যারা সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে, তারাই এই সংগঠনের প্রতিনিধিকে অভ্যর্থনা জানাল!”

এরপর এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার)-এ তিনি আরও লেখেন, “ভীষণভাবে চেয়েছিলাম, অঞ্জনা ওম কাশ্যপ, চিত্রা, নভিকা বা রুবিকার মতো তীক্ষ্ণবুদ্ধি মহিলা সাংবাদিকরা যদি ওই নারী-বিদ্বেষী তালিবানি মন্ত্রীর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে যদি উপস্থিত থাকতেন! দুর্ভাগ্যবশত, তা সম্ভব হল না।”

এরপরই এক ব্যবহারকারী বর্ষীয়ান শিল্পীর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে লেখে, “স্যার, আপনি তো শিল্পী। নারী সেজে সাংবাদিক বৈঠকে  চলে যান না কেন?” জাভেদ আখতারের জবাব ছিল রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। তবে অবশ্যই সেই জবাবে মিশেছিল বরাবরের মতো রুচিবোধ এবং তীক্ষ্ণ শ্লেষ -“ভাই, তোমার জন্য সত্যি দুঃখ হচ্ছে। প্রকৃতি তোমার সঙ্গে সুবিচার করেনি। তবু অন্তত নিজের নাম বলতে পারো, নিজে খেতে পারো, জামাকাপড় পালটাতে পারো, রাস্তা পার হতে পারো। এজন্য কৃতজ্ঞ হও।”

 

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 14, 2025

 

 

 

 

তাঁর এই জবাব মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় নেটমাধ্যমে। নেটিজেনদের বড় অংশই বর্ষীয়ান শিল্পীকে কুর্নিশ জানিয়ে লেখেন, “একেবারে মুখের উপর রাজকীয় জবাব!”, কেউ বা লেখেন, “কথার মধ্যেই ছুরি চালালেন আখতার সাহেব!”

মুত্তাকিরের সাংবাদিক বৈঠকের গোটা ঘটনায় সুর চড়ায় কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। তালিবান আফগানিস্তানে যে গোঁড়া, রক্ষণশীল, লিঙ্গবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা চালায় বলে অভিযোগ, তার প্রতিফলনই ভারতে দেখা গেল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিতর্কের মুখে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, বিষয়টিতে তাদের কোনও হাত নেই।