মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন আইপিএস রাকেশ মারিয়া ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত করেছিলেন। সম্প্রতি সেই সময়কার অভিজ্ঞতা ফের তুলে ধরেছেন। তাঁর তদন্তেই অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের বেআইনি অস্ত্র রাখার বিষয়টি সামনে আসে এবং পরে তাঁকে জেলও যেতে হয়। এক সাক্ষাৎকারে রাকেশ জানান, কীভাবে তদন্ত করতে গিয়ে তাঁদের সন্দেহ সঞ্জয়ের দিকে যায় এবং এক আবেগঘন মুহূর্তে সঞ্জয় নাকি তাঁর বাবা সুনীল দত্তের পায়ে পড়ে ভুল স্বীকার করেছিলেন।

রাকেশ বলেন, বান্দ্রায় এক রেস্তরাঁর মালিক হানিফ কদওয়ালা এবং ইম্পা-র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সমীর হিঙ্গোরাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রথম সঞ্জয়ের নাম উঠে আসে। তিনি জানান, “ওরা বলল বড় লোকদের কেন ধরছেন না? আর বলল, সঞ্জু বাবার কথাই বলছি। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি।”

রাকেশের দাবি, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত অস্ত্র গাড়ির ভিতরের গোপন জায়গা থেকে কোথাও নামানোর জন্য অভিযুক্তেরা সঞ্জয় দত্তের বাড়ির কথা ভেবেছিল। তিনি বলেন, “ওরা সঞ্জয়ের বাড়িতে যায়। সঞ্জয় ফোন পেয়ে বলেছিল গাড়ি রেখে জিনিস নামিয়ে রাখতে।”

তাঁর কথায়, সঞ্জয় কিছু অস্ত্র নিজের কাছে রেখেছিলেন, বাকিগুলো ফিরিয়ে দেন। অভিনেতা তখন মরিশাসে শুটিংয়ে ছিলেন। দেশে ফেরার পরই বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রাকেশ জানান, সঞ্জয়কে ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল, যেখানে বাথরুমের দরজাও খুলে নেওয়া হয়। তাঁকে সিগারেট বা ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। রাকেশ বলেন, “ভোরে আমি ঘরে ঢুকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি নিজে বলবে, নাকি আমি বলব?’”

তিনি আরও বলেন, “সঞ্জয় আমাকে প্রথমে বলেন যে তিনি নির্দোষ এবং এই ঘটনায় তাঁর কোনও হাত নেই। গত ক’দিনের চাপ আর আবেগ মাথায় চেপে বসেছিল। সে সামনে চেয়ারে বসেছিল। আমি উঠে গিয়ে তাকে একটা থাপ্পড় দিই। সে খানিকটা কেঁপে যায়, আমি তার চুল ধরে তাকে সোজা করি। তারপর বলি—‘ভদ্রভাবে কথা বলবে, নাকি অন্যভাবে বলাতে হবে?’ তখন সে অনুরোধ করে একা কথা বলতে চায়। একান্তে বসে সে সব ঘটনা খুলে বলে। সে স্বীকার করেছিল। বলেছিল, ‘ভুল হয়ে গিয়েছে, প্লিজ আমার বাবাকে বলবেন না।’ আমি তখনই জানিয়েছিলাম, এই ভুল লুকিয়ে রাখা যায় না। ভুল করলে তার দায়িত্বও নিতে হয়।’”


সেদিন সন্ধ্যায় সুনীল দত্ত তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সঙ্গে ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার, মহেশ ভাট, যশ জোহর এবং বলদেব খোসা। তাঁরা সঞ্জয়কে নির্দোষ বলেই দাবি করেন।

রাকেশ সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটি মনে করে বলেন, “সঞ্জয়কে ঘরে আনা হলে সে বাবাকে দেখেই ভেঙে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে সুনীল দত্তের পায়ের কাছে পড়ে বলে—‘বাবা, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।’ সুনীল দত্তের মুখ তখন একদম ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল।”

সেই সব বিতর্ক এখন অতীত। যাবতীয় ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন সঞ্জয়। কাজ আর পরিবারই এখন তাঁর জীবন।