“জঙ্গল জঙ্গল বাত চলি হ্যায়…” নয়ের দশকের প্রতিটি ভারতীয় শিশুর হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকা এই গানটিতে থাকা ‘চাড্ডি’ শব্দটি প্রায় বাদই পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অস্কারজয়ী কিংবদন্তি লেখক-গীতিকার গুলজার তাঁর অনমনীয় অবস্থানের জোরেই গানটি আজ যেমনটি আমরা চিনি, তেমনই থেকে গিয়েছে নির্মল, দুষ্টুমি-ভরা, আর পুরোপুরি শিশুদের মতো সহজ-সরল।

দেহরাদুন লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত হয়ে সেই স্মৃতি শোনালেন সুরকার–পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ। তিনি জানান, আসলে তাঁকে ডাকা হয়েছিল একেবারে শেষ মুহূর্তে। দ্য ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভলমপেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনএফডিসি) বিদেশি অ্যানিমেটেড সিরিজ হিন্দিতে ডাব করত, এবং ‘জঙ্গল বুক’-এর টাইটেল ট্র্যাক তৈরির দায়িত্বে থাকা আগের সুরকার হঠাৎ জরুরি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কাজটি এসে পড়ে বিশালের হাতে। “গুলজার সাহেব আমাকে তখন খুবই স্নেহ করতেন। আমি তখন স্ট্রাগল করছি। সেই অবস্থায় তিনি আমাকে বাড়িতে ডাকলেন,” স্মৃতিচারণ বিশালের।

গুলজার বলেছিলেন, “আজই সুর, কাল রেকর্ডিং, পরশু টেলিকাস্ট। কাজ শুরু করো।”এরই মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গানের মধ্যে থাকা একটি এক শব্দ, ‘চাড্ডি’। এনএফডিসি–র কিছু আমলা বলেছিলেন, এই চাড্ডি শব্দটি ‘অদ্ভুত’ শোনাচ্ছে, গান থেকে বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু গুলজার অনড় ছিলেন। বিশালের কথায়, গুলজার স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, “অদ্ভুত তোমাদের ভাবনা। এটাই শিশুর ইমেজ। গান গেলে ঠিক এভাবেই যাবে, ঠিক এভাবেই। না হলে যাবেই না।”
অবশেষে কর্তারা কোনও পথ না পেয়ে ‘জঙ্গল বুক’-এর গানটি ঠিক আগের মতোই সম্প্রচার করেন আর তৈরি হয় ভারতীয় পপ-কালচারের এক স্থায়ী স্মৃতি।ফেস্টিভ্যাল মঞ্চেই বিশাল ভরদ্বাজ আক্ষেপ করে বলেন, ভারতীয় বিনোদন জগতে এখনও শিশুদের জন্য সিনেমা বা কনটেন্ট তৈরি হয় অত্যন্ত কম। “আমাদের দেশে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ কিছুই নেই। তারা সব সময়ই হলিউড বা বিদেশি অ্যানিমেশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।বলিউড যা বানায়, তার মধ্যেও বাচ্চাদের জন্য প্রায় কিছুই থাকে না।”
এই উৎসবের থিম ছিল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম: ভয়েসেস অফ ইউনিটি’। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সিজেআই ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, নন্দিতা দাস, শোভা দে, ঊষা উত্থুপ সহ বহু উল্লেখযোগ্য শিল্পী ও চিন্তাবিদ। বহুবিধ আলোচনায়, মত বিনিময়ে, সংস্কৃতির সেতুবন্ধনে মহোৎসব রঙিন হয়ে উঠেছে। রবিবার এই সাহিত্য-উৎসবের পর্দা নামবে।
