আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইংল্যান্ডের ইস্ট সাসেক্সের ইস্টবর্নে এক মহিলার বহু দিনের অভ্যাস এবার তাঁকে এনে দিল এক বিব্রতকর অভিজ্ঞতা। ৫৮ বছরের লরেন ফোর্বস, যিনি দীর্ঘ তিন দশক ধরে সমুদ্রের ধারে বসবাস করছেন, বহু বছর ধরে প্লাস্টিক বোতলে হাতে লেখা চিঠি ভরে সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন “অচেনা কাউকে খুঁজে পাওয়ার রোমান্টিক আশায়”। ফ্রান্স এবং হল্যান্ডের উপকূলে তাঁর বার্তা পৌঁছানোর ঘটনাও ঘটেছে—তবে বেশির ভাগ সময়ই বোতলগুলো ভেসে ফিরে এসেছে কাছের সৈকতেই।
কিন্তু সম্প্রতি তাঁর এক চিঠি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঠিয়েছেন তীব্র ভাষায় লেখা নোট—সেটিও আবার একটি পাথরভরা বাক্সের ভেতরে, যা গ্রহণ করতে লরেনকে খরচ করতে হয়েছে ৭ পাউন্ড।
কী ছিল সেই ‘রাগী’ বার্তায়?
ফেরত পাওয়া নোটটিতে লেখা ছিল—“দয়া করে সমুদ্রে আবর্জনা ছুড়ে ফেলা বন্ধ করুন। এগুলো একদিনের মধ্যেই পিভেনসি বে বা নরম্যানস বে'তে এসে পড়ে। ধন্যবাদ—একজন আবর্জনা সংগ্রাহক।”
চিঠিটি ছিল জন লাইডন (পাঙ্ক রক শিল্পী)–এর কনসার্টের ফ্লায়ারের পেছনে লেখা, যা লরেন আগের মতোই বোতলে ভরে সাগরে ছুড়ে দিয়েছিলেন। নাম–ঠিকানা থাকার ফলে পরিচ্ছন্নতা কর্মী সরাসরি তাঁকে বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন। পাথরভর্তি বাক্সটি ৫ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয় এবং ৭ অক্টোবর লরেনের হাতে পৌঁছায়।
‘রোমান্স চাইছিলাম, গালাগাল নয়’—অভিযোগ লরেনের। লরেন জানান, তিনি এই ‘অতিথিভাবাপন্ন’, কিছুটা পুরনো ঢঙের শখটি বহুদিন ধরে বজায় রেখেছেন। কেউ কখনো উত্তর দিলে বেশির অংশই শুধু জানায় কোথায় বোতলটি পেয়েছে—মিলনের ইচ্ছা প্রায় কেউ প্রকাশ করেন না।
কিন্তু এইবার পাওয়া প্রতিক্রিয়া তাঁকে চমকে দিয়েছে। তাঁর ভাষায়—“এটা খুবই নিষ্ঠুর। চিঠি নিতে আমাকে ৭ পাউন্ড খরচ করতে হলো। যে লিখেছে সে নিজের নামও লেখেনি—কাপুরুষ কোথাকার”। যদিও পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল, লরেন স্বীকার করেছেন, প্লাস্টিক বোতল ফেলা নিয়ে আগেও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। ইস্টবর্ন পিয়ার ও ইস্টবর্ন হারবার–এর কর্মীরা তাঁকে বহুবার থামতে বলেছেন—কারণ এতে স্থানীয় সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। তিনি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন কাঁচ ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে—তবে প্লাস্টিকই আবার পরিবেশের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিকর।
ঘটনাটি তাঁর কাছে কঠিন ধাক্কা হয়ে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন—“এখন বুঝতে পারছি, পরিবেশ দপ্তর যদি আমার ঠিকানাসহ বোতল পেয়ে যায়, তাহলে আইনি ঝামেলায় পড়তে পারি।”
এই অভিজ্ঞতার পর লরেন বলছেন, তিনি হয়তো আর সাগরে বার্তা পাঠানোর শখটি চালিয়ে যাবেন না। কারণ, পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি আইনি জটিলতার আশঙ্কাও তাঁকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। সমুদ্র দূষণ নিয়ে সচেতনতার যুগে রোমান্স খোঁজার সেই পুরনো কায়দা হয়তো এখন সময়ের সঙ্গে বেমানান—এমনই বাস্তবতা এবার বুঝতে বাধ্য হলেন ইস্টবর্নের এই বাসিন্দা।
