না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বলিউডের 'হি-ম্যান'। প্রয়াণকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝে ক'দিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। 

আজকাল ডট ইন-এর কাছে ভাগ করে নিলেন প্রয়াত অভিনেতার সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়ের স্মৃতি। এই দুঃসংবাদ পেয়ে তিনি বলেন, "বয়স হয়েছিল, ভুগছিলেন। কিন্তু ধর্মেন্দ্র আমার জীবনকালের সবথেকে সুদর্শন হিরো। ভীষণ ভাল লোক ছিলেন। আমি ওঁর দুটো ডাক ভীষণ মিস করব। আমাকে তিনি সবসময় ডাকতেন, 'এ কুড়িয়ে, শুন...' বলে। কুড়িয়ে মানে পুতুলের মতো। আর বলতেন, 'ঝাল্লি'। কিছু হয়ে গেলেই বলত, 'ইয়ে উসনে নেহি বোলা না? ও নেহি করেগি, ও তো বিলকুল ঝাল্লি হ্যায়, ঝাল্লি'। মানে পাগল। আমি অনেক জায়গায় ওই যাকে বলে বেয়াদপি করেছি। কিন্তু উনি আমায় ভীষণ স্নেহ করতেন। ভালবাসতেন। ভীষণ আগলে রাখতেন সবাইকে। অনেক সময় আমায় ধমক দিয়ে বলতেন, 'এখানে কেন? বাবু কোথায়?' মানে আমার স্বামী। বলতেন, 'যাও ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াও। এই লোকগুলো এখন মাতাল হয়ে আছে।' উনি জানতেন কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত।' গলা বুজে আসে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর। নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, "আমি ওঁকে খুব ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। আমার কাছে উনি সবসময় থাকবেন, কারণ আমি মনে করি এই মানুষগুলো চলে যান না। তাঁরা থেকে যান। তবে খবরটা খুবই দুঃখজনক।" 

কথা বলতে বলতেই সুসময়ের স্মৃতিতে ডুব দেন তিনি। তাঁদের আন্তরিক সম্পর্কের কথা মনে করে বলেন, "উনি পায়েলকে, আমার বড় মেয়েকে এত ভালবাসতেন... ওকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। আর খালি বলতেন একে আমি ববির বউ বানাব। এই তুই হ্যাঁ বল। আমি বলতাম, বাস্তব জীবনকে ছবির মতো বানাব না। এখনও মনে আছে, নাসিকে... পায়েলের তখন বোধহয় দেড় বছর বয়স। আমাদের যে মালাগুলো পরানো হয়েছিল সেগুলো সব ওকে পরিয়ে দিয়েছিলেন ধরমজি। তারপরই বলেন, ওকে আমি আমার ছোট ছেলের বউ করব। তুই হ্যাঁ বলে দে। আমি বলি আমি জানি না আমার মেয়ে বড় হয়ে কাকে বিয়ে করবে, কী করবে... তুমি রিয়েল লাইফ ছবি বানাচ্ছ? আর উনি স্পষ্ট বলতেন, তোকে যদি কেউ বিরক্ত করে তুই খালি আমায় বলবি।" 
ধর্মেন্দ্র কতটা দায়িত্ববান ছিলেন সেটা স্মরণ করে তিনি বলেন, "ভীষণ দায়িত্ববান ছিলেন। একটা ছবির মহরত থেকে উনি রীতিমত আমায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার সঙ্গে এসেছ এখানে? বলি, বাবু তো বাইরে, আমি কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এসেছি। মানে রানি মুখোপাধ্যায়ের মা। ওই জোর করে আমায় নিয়ে গিয়েছিল। ধমক দিয়ে বলেন, এমন একটা জায়গায় একা এসেছ! বলেই ওঁর এক আত্মীয়কে ডেকে বলেন আমায় বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসতে। উনি আমার শ্বশুর মশাইকেও তো ভীষণ ভাল ভাবে চিনতেন।" 

ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্যে তিনি যাবেন কিনা, বা শ্রদ্ধাস্পদকে শেষ একবার দেখতে যাবেন কিনা জানতে চাইলে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর বড় মেয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি এগুলো একটু এড়িয়ে চলেন।

প্রসঙ্গত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯। বলিউডের 'হিম্যান' ছিলেন তিনি। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন পাঞ্জাবের মনসপুত্র। উপহার দিয়েছেন 'শোলে' (১৯৭৫), 'চুপকে চুপকে' (১৯৭৫), 'ইঁয়াদো কি বারাত' (১৯৭৩), ইত্যাদির মতো ছবি। কাজ করেছেন বর্তমান সময়ের 'রকি অর রানি কী প্রেম কাহানি', 'ইক্কিস', 'অগ্নিযুগ দ্য ফায়ার' -এর মতো ছবিতেও। যদিও 'ইক্কিস' এখনও মুক্তি পায়নি। আগামী ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পাবে সেই ছবি।