সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানা এলাকার একটি স্কুলে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। তাঁর কথা অনুযায়ী সেখানেই শো চলাকালীন এক ব্যক্তি মঞ্চে উঠে আসেন, এবং তাঁকে মারতে যান। বর্তমানে কেমন আছেন, আগামীতে শো করবেন কিনা, এ সমস্ত কিছুই তিনি আজকাল ডট ইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। 

লগ্নজিতা চক্রবর্তী এদিন তাঁর কথা প্রসঙ্গে সবার আগেই জানিয়ে দেন এইভাবে তাঁকে 'খারাপ রাখানো একটু মুশকিল'। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল গত ২০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে? 'প্রেমে পড়া বারণ' গায়িকা বলেন, "গান, শো, রেকর্ডিং এসবের মধ্যেই আমি থাকতে চেয়েছিলাম। এসবে (কেস , জটিলতা) যে খুব বেশি ঢুকতে চেয়েছিলাম সেটা নয়। কিন্তু আমাকে যখন কালকে মেহবুব মল্লিক স্টেজে উঠে মারতে গেলেন, তখন আমি নেমে ব্যান্ড এবং বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম যে এটা আমাকে করতেই হবে। কাউকে আমি আমাকে মারার অধিকার দিইনি। ছোটবেলায় বাবা মাকে দিয়েছিলাম, তারপর আর কাউকে দিইনি।" 

প্রসঙ্গত, এটাই প্রথম নয়। কিছুদিন আগে স্নিগ্ধজিৎ যখন 'আল্লাহ কে বান্দে' গানটি একটি অনুষ্ঠানে গাইছিলেন তখন তাঁকে সেই গান থামাতে বলা হয়। আর গতকালের অনুষ্ঠানে লগ্নজিতা চক্রবর্তী 'দেবী চৌধুরাণী' ছবিটি থেকে 'জাগো মা' গাইলে তাঁকে 'সেক্যুলার গান' গাইতে বলা হয়। সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে বারংবার এমন ঘটনা প্রসঙ্গ লগ্নজিতা বলেন, "কুমন্তব্য এক রকম। কুমন্তব্য অনেক সময় হয়। কিন্তু আমার অনুষ্ঠানে সেটাও খুব একটা হয় না, তার কারণ হচ্ছে, আমার অনুষ্ঠানের ধরন যেহেতু আলাদা, সবই স্লো গান। লোকে বোর হয়ে বাড়ি চলে যেতে পারে, কিন্তু উত্তেজিত হয়ে কুমন্তব্য করবে, এমনটা খুব একটা হয় না। কিন্তু এর আগে কেউ মারতে আসেননি। এর আগেও যদি কেউ এটা করত, তখনও আমি অভিযোগ জানাতাম।" 

এভাবে স্টেজে এক ব্যক্তি উঠে এসে তাঁকে মারতে আসায় গায়িকা ভয় পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টতই বলেন, "না, আমি এসব নিয়ে ভয় পাই না। আমার ভয় পাওয়ার অন্য জিনিস আছে। মা বাবা, শ্বশুর শাশুড়ির শরীর খারাপ হলে ভয় পাই, রোজ ২-৩ ঘণ্টা বসে মন দিয়ে যদি বই না পড়তে পারি তাহলে ভয় পাই, যখন ৩-৪ দিন হয়ে যায়, রোজ কোথাও না কোথাও যেতে হয়, রেওয়াজে বসা হয় না তখন ভয় পাই। এসব নিয়ে ভয় হয়, কিন্তু যেটা ঘটল সেটা নিয়ে নয়।"

বিষয়টায় কী কোনও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে? রাজনীতি করা হচ্ছে যা ঘটেছে সেটা নিয়ে? গায়িকার সাফ জবাব, "করা হচ্ছে কিনা বলতে পারব না। কিন্তু আমি করিনি। আমি যে অভিযোগ জানিয়েছি থানায়, সেটা এখন সবাই দেখে ফেলেছেন, ওখানে একটা লাইন এমন নেই যাতে রাজনৈতিক কোনও উস্কানি দেওয়া কথা আছে। আমি আজ যেখানে, যা বলেছি তাতেও এমন কিছু বলিনি। আমার কাছে এটা রাজনৈতিক কোনও ব্যাপার নয়। আমার কাছে বিষয়টা খুব সহজ, আমি স্টেজে দাঁড়িয়ে গান গাইছিলাম, আর উনি আমায় মারতে এসেছিলেন। যেটা উনি করতে পারেন না। উনি যে কোনও দল, ধর্মের হতে পারেন। এমনকী উনি কোনও মহিলা হলেও আমি অভিযোগ করতাম। যদি আবার কেউ মারতে আসে আমি আবার অভিযোগ করব।" 

কিন্তু এদিন যে ঘটনা ঘটল, তারপর কি তিনি আর 'জাগো মা' গাইবেন কোনও অনুষ্ঠানে? সম্মতি জানিয়ে বলেন, "আমার পুলিশ, প্রশাসন সবার উপর ভরসা আছে। সম্পূর্ণ আস্থা আছে। ২৬ তারিখ আরামবাগে শো আছে। আমি জানি আমার পুলিশ এবং প্রশাসন এটা নিশ্চিত করবে যাতে আমি ৭ নম্বরে 'জাগো মা' গেয়ে, তারপর আরও আধ এক ঘণ্টা শো করে অক্ষত অবস্থায় এই ঘরে ফিরে আসতে পারি।" 

প্রসঙ্গত, গত ২০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে লগ্নজিতা চক্রবর্তী সন্ধ্যা সাতটায় মঞ্চে ওঠেন। পরপর গান গাইছিলেন। অভিযোগ, সাত নম্বরে 'জাগো মা' গানটি গেয়ে তিনি দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে আট নম্বর গানের দিকে যখন এগোচ্ছেন তখন এক ব্যক্তি মঞ্চে উঠে তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন, এবং এই গান বন্ধ করে সেক্যুলার গান গাইতে বলেন। এরপরই তিনি শো থামিয়ে বেরিয়ে যান। থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।