নতুন সিরিজ তৈরি করেছেন আরিয়ান খান। ‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’। শাহরুখ-পুত্রের হাতেখড়িতে হাজির প্রায় গোটা বলিউড। খান, জোহর, দেওলরা ইতিমধ্যেই নজর কেড়ে বসে আছেন। তবে তারকাখচিত কাস্টে নীরবে নিজেকে শামিল করেছেন এক বঙ্গললনাও। তিনি ঈশিকা দে। হাওড়ার মেয়ে। বাংলার মেয়ে।

‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’-এ অপেক্ষাকৃত ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও তার অভিঘাত বিস্তর বলেই মনে করছেন ঈশিকা। জানান, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় শাহরুখ খানের প্রোডাকশন হাউজে অভিনয়ের সুযোগ পেতে। আজকাল ডট ইন-কে অভিনেত্রী বলেন, “আমি এই চরিত্রটার জন্য অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। অনেকের মধ্যে থেকে আমাকে নির্বাচন করা হয়। এক-একটা চরিত্রের জন্য আরিয়ান একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রীর অডিশন নিয়েছে। খুব সূক্ষ্ণভাবে সেখান থেকে বাছাই করেছে একজনকে। ওর মুকুটে কোন কোন রত্ন থাকবে, তা নিয়ে আরিয়ান শুরু থেকেই খুব মনোযোগী।”

আরিয়ানের প্রথম কাজের অংশ। বিশাল বাজেট, বিপুল ব্যপ্তি, চোখ ধাঁধানো আয়োজন— মুম্বইয়ে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাওয়া মেয়ের কর্মপরিসরে এসবই যেন বিরাট প্রাপ্তি! ঈশিকার কথায়, “যে কোনও অভিনেতারই স্বপ্ন ভাল, বড় প্রজেক্টে কাজ। এই সিরিজের হাত ধরে সেই ইচ্ছাপূরণ হল বলা যায়। আর আরিয়ান পরিচালক হিসাবে এখনই খুব পরিণত। ওর সঙ্গে কাজ করে তাই অন্য রকম আনন্দ আছে। ও সেটে প্রত্যেকের সঙ্গে খুব সুন্দর আচরণ করে। যে যা পরামর্শ দেয়, সেটা মন দিয়ে শোনে। কিন্তু সব শেষে ওর একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর থেকে যা লাগবে, খুব সুনিপুণ ভাবে তা বার করে নেয়। এত অল্প বয়সেই কাজের ক্ষেত্রে ও খুব পরিণত।”

অনেকেরই ধারণা, আরিয়ান স্বল্পভাষী। অন্তর্মুখী। ক্যামেরার সামনেও তাঁর মুখে হাসি দেখা যায় না বিশেষ। সেটেও কি তিনি সেরকম? প্রশ্ন শুনেই হেসে উঠলেন ঈশিকা। বললেন, “একদমই না। সেটে ও একেবারেই উল্টো। সারাক্ষণ হাসছে। সবার সঙ্গে গল্প করছে। প্রয়োজনে আবার মেঝেতেও বসে পড়ছে। এত সুন্দর ব্যবহার ওর! দেখে মুগ্ধ হতে হয়। যতবার আরিয়ানকে দেখি শাহরুখ স্যর আর গৌরী ম্যামের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। মা-বাবার সুশিক্ষাই তো সন্তানকে এমন তৈরি করে।”

আরিয়ানের প্রশংসায় সেটে আরও এক ঘটনার কথা মনে পড়ে ঈশিকার। স্মৃতির পাতা উল্টে তিনি বলেন, “আরিয়ান সেটে কখনও ইংরেজিতে কথা বলত না। সবার যাতে বুঝতে সুবিধা হয়, সেই কারণে হিন্দিতে কথা বলত। একবার একজন জুনিয়র আর্টিস্ট একবার ওর সঙ্গে ছবি তুলতে আসেন। ও বলেছিল, কাজ শেষ করে তুলবে। সেই ব্যক্তি মুখ কাচুমাচু করে চলে যান। অন্য কেউ হলে হয়তো পাত্তাও দিত না। আরিয়ান আবার তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে আশ্বাস দেয় ছবি তোলার। শুধুমাত্র সে যাতে মন না খারাপ করে, তাই।”

আরিয়ানের সিরিজকে ঘিরে রয়েছে যেমন কৌতুহল, তেমনই পিছু ছাড়েনি সমালোচনা। নিন্দকেরা বলছেন, শাহরুখ-তনয় আদৌ কিছুই করেননি। সবটাই সামলেছেন তাঁর বাবা। শুধু কৃতিত্ব কুড়িয়ে নিতে ‘পরিচালক’-এর তকমা সেটে দেওয়া হয়েছে ‘রাজপুত্র’-এর গায়ে। ঈশিকাও যে এমনটা শোনেননি, তা নয়। অভিনেত্রীর কথায়, “একাধিক মানুষ আমার কাছে জানতে চান যে, আরিয়ান সত্যিই এই সিরিজটি বানিয়েছে নাকি অন্য কেউ ওর হয়ে সবটা করেছে। বিশ্বাস করুন, ও খুব খেটে সবটা নিজে করেছে। ওর বন্ধুরা ছিল ওর সঙ্গী। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো খুব খেটেছে।”

১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে ‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’। নেটফ্লিক্সের পর্দায় নিজেকে দেখার ইচ্ছায় ঈশিকা। ইচ্ছা— দ্বিতীয় সিজন যদি আসে, সেখানে যেন আরও বিস্তৃত হয় তাঁর অভিনীত চরিত্রের পরিসর। ২৬ সেপ্টেম্বর জি ফাইভে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর আরও একটি সিরিজ ‘জানাওয়ার’। বাংলাতেও হাতেখড়ি ইতিমধ্যেই সারা। রুক্মিণী মৈত্র এবং চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী সঙ্গে 'হাঁটি হাঁটি পা পা'-এ দেখা যাবে তাঁকে। একাধিক বিজ্ঞাপণের কাজ নিয়েও আপাতত ব্যস্ত বঙ্গতনয়া।