গত ১৪ নভেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল 'অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস' ছবিটির। পুরোদমে চলছিল ছবির প্রচার। তার মধ্যেই তাল কাটল। ২০২১ সালে করোনা পরবর্তীকালে 'অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস' ছবিটি বানানো হয়েছিল। মাত্র ২৫ লাখ টাকা বাজেটে এসআরএফটিআইয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ছবিটি তৈরি করেন। তাঁদের সেই ছবিতে ফেডারেশনের একজনও না থাকায়, বা অনুমতি না নেওয়ায় আটকে দেওয়া হয়েছে এই ছবির মুক্তি।

 


এই ছবি মুক্তি নিয়ে তোলপাড় সমাজমাধ্যম। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই ছবি মুক্তির পক্ষে রয়েছেন। ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা মিটমাট করার কথাই বলছেন অনেকে। তবে এর মধ্যেই বেঁকে বসলেন পরিচালক ও ডিরেক্টর গিল্ডের প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত সেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, 'বিশ্বাস নাও করতে পারেন। কিন্তু টাকা খেয়ে বাংলা ছবিকে শেষ করে দেওয়ার প্রসেস শুরু হয়ে গেছে। টাকা খেয়ে বাংলাকেই শেষ করে দেওয়ার প্রসেসের এটা একটা বাঙালিদেরই অংশ মাত্র। বাঙালিদের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ। টাকা দিয়ে রিলিজ করা মাফিয়া বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াবেন না। যেমন পুজোর রিলিজের বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াননি। সব কটা ফ্লপ করেছে। বাংলা সিনেমা জাস্ট দেখবেন না।"

 


ব্যাস! সুব্রত সেনের এই পোস্টেই ক্ষেপে লাল ইন্ডাস্ট্রির বহু পরিচালক-প্রযোজক। তাঁদের কথায়, এভাবে বাংলা ছবির দর্শককে ভুল বোঝানো উচিত নয়। কিছু অন্তবর্তী নিয়ম রয়েছে, যা মেনে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করার উপায় খোঁজা উচিত। 

 

এ বিষয়ে প্রযোজক রাণা সরকার লেখেন, 'সুব্রতদা, তোমার রাতের পোস্ট গুলোতে আগে মজা পেতাম, সেগুলোতে জ্ঞান বুদ্ধিমত্তা ও কৌতুক থাকতো। শেষ কয়েক বছর ধরে তোমার রাতের পোস্টগুলো তোমার মানসিক অবস্থাকে নিয়ে ভাবাচ্ছে, এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করে কথাও বলেছি, তোমার পরিবার ও চিন্তিত, এগুলো থামাও প্লিজ। সুব্রত দা, তোমার কাছে আশা করিনা তুমি এটা পাবলিক পোস্টে বলবে "বাংলা সিনেমা দেখবেন না"। ছিঃ সুব্রতদা, তোমার কি বোধবুদ্ধি হারিয়েছে?'

 


প্রযোজক আরও লেখেন, 'তুমি তো ফেডারেশনের সর্বোচ্চ কমিটিতে ছিলে, স্বরূপ তোমাকে খুবই সম্মান করতো, তখন তো এসব সমস্যার সমাধান করতে পারতে, করোনি কেন? সুব্রতদা, ফেডারেশনে ইসি কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে তুমি জানো যে ফেডারেশন কোনোভাবে কোন অন্যায্য টাকা নেয়না কোন প্রযোজকের কাছে বকেয়া নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে। তাহলে টাকার বিনিময়ে সমস্যা সমাধান হবে এটা বলছো কেন?'

 


তিনি লেখেন, 'ডিএইআই নিয়ে তোমরা সম্পূর্ণ এক ভুল রাস্তায় চলে গেছিলে, আমি তোমাকে অনেকবার বুঝিয়েছি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে, অথবা পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসতে, তুমি করনি, কেন করোনি পদত্যাগ সুব্রতদা ? কিসের লোভ কিসের ইগো কিসের রাগ ? তোমাদের জন্য তো পুরো ইন্ডাস্ট্রি স্তব্দ হয়ে গেছিলো তার জন্য বিবেকের দংশন হয়না? দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস' সিনেমা রিলিজ নিয়ে সমস্যা হয়েছে, এই সমস্যাও আলোচনার মাধ্যমে মিটে যাবে, আমরা সবাই চেষ্টা করি চলো, ফেডারেশনের নিয়মনীতি মেনে এতদিন তো খারাপ কিছু হয়নি, হবেও না। হ্যাঁ একটা দালাল চক্র ফেডারেশন ও ইম্পার নাম করে টাকা তোলার চেষ্টা করেছিল, আমার কাছে খবর আসায় আমি যথাযথ জায়গায় জানাই। আর এই যে সব ডিরেক্টর কপি পেস্ট পোস্ট করছে এটাতো প্রথমে শুরু করেছে বিজেপি আইটি সেল আর পরে ডিএআই ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়। যে পথ তোমরা শিখিয়েছ তার দায় তো তোমাদেরই নিতে হবে সুব্রতদা।'

 

রাণা আরও লেখেন, 'তুমিও অনেক সিনেমা বানিয়েছো, তোমার সিনেমা অনেক দর্শক দেখেছে,সিনেমা ও দর্শকের প্রতি তোমার দায়বদ্ধতা নেই ? নাকি ব্যক্তিগত রাগ ইগোর কারনে সব ভুলে গেছো? কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের সমস্যা প্রকাশ্য  করে দিয়ে অসংখ্য দর্শককে বাংলা সিনেমা বিমুখ করে তুলোনা প্লিজ, দর্শক এত কিছু বোঝে না তারা মানসিক ভাবে নেগেটিভ হয়ে যাবে।তোমার বা তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা, ঝগড়া, ইগোর কারণে এখনো যারা সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখে দর্শকদের মননে তাদের প্রতি বিরুপ মনোভাব তৈরী হতে দিওনা।'

 


ফেডারেশনের বিরোধী পোস্ট বা বাংলা ছবি নিয়ে কুমন্তব্য মেনে নিচ্ছেন না পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত, রাহুল মুখোপাধ্যায়, সৃজিত রায়-সহ আরও অনেকেই। যদিও তাঁরাও এক সময় বিপাকে পড়েছিলেন। তবে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু মিটে গিয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন পরিচালকরা। তাই এবার নিজেদের পোস্টের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিকে বদনাম করা নিয়ে সরব তাঁরা।

 


'অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস' মুক্তির জট নিয়ে আজকাল ডট ইন-কে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক সুজিত হাজরা জানান, "দেখুন ইম্পার কথা এখনই তুলতে চাইছি না, আমি আমার কথাই বলছি, ওঁরা এই ছবিটা কোনও টেকনিশিয়ান নিয়ে করেননি। এবং সেটার জন্য আমাদের কোনও অনুমতি নেননি, আমরা জানতামও না যে এই ছবির শুটিং হয়েছে। অনেকেই আছেন এমন যাঁরা টেকনিশিয়ান নিয়ে কাজ করেন না, তবুও সেটার বিষয় আমি জানতে পারি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি জানতে পারিনি। সব থেকে বড় কথা এই ছবির শুটিং হয়ে যাওয়ার পরেও আমি কিছু জানতাম না।" কিন্তু সেটা আগে কেন জানাননি তাঁরা। ছবি মুক্তির দু'দিন আগেই কেন সেটাকে আটকে দেওয়া হল? তাঁর জবাব, "আগে জানতামই না। ছবির টিজার দেখে জানতে পেরেছি ছবিটার কথা। যখন জানতে পেরেছি, তখনই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।"