থ্রিলারে মজেছে দর্শক মহল। রহস্যের আঁচ পেলেই দর্শকের ছবি দেখার ইচ্ছেও বাড়ে। বাংলা ছবির রহস্য ভাণ্ডারে জুড়ছে আরও এক ছবি, নাম অটোবি। পরিচালনায় সৌমাভ ব্যানার্জি। প্রযোজনায় ডিকে ভারতী ও সিদ্ধি বিনায়ক ক্রিয়েশন। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন মধুমিতা সরকার, ইনায়া চৌধুরী, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরিয়ান ভৌমিক।
গল্পে মধুমিতার চরিত্রের নাম 'ডিম্পল'। ইনায়ার চরিত্রের নাম 'তানিয়া'। অন্যদিকে, আরিয়ানকে দেখা যাবে মধুমিতার স্বামী 'সঞ্জীব'-এর চরিত্রে। একজন সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা যাবে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে এবং জঙ্গলের গাইডের চরিত্রে থাকবেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

গল্পের শুরু হয় অতীতের এক মর্মান্তিক পারিবারিক দুর্ঘটনা দিয়ে, যেখানে দুই বোন—ডিম্পল এবং তানিয়া—তাদের চোখের সামনে বাবা-মায়ের ভয়াবহ মৃত্যু দেখে। এই মানসিক আঘাত দুই বোনকে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রাখে। বড় হওয়ার পর ডিম্পল তানিয়ার প্রতি অতিরিক্ত রক্ষণশীল হয়ে ওঠে।
দুঃস্বপ্নের শুরু হয় যখন ঝাড়গ্রাম পুলিশ স্টেশন থেকে ডিম্পল একটি ফোন পায়। জানা যায়, স্কুল শিক্ষিকা তানিয়া গত কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ । তদন্তে উঠে আসে এক ভয়ানক তথ্য—তানিয়াকে শেষবার দেখা গিয়েছিল চামসুট্টি জঙ্গলের সামনে। যা স্থানীয়দের কাছে আত্মহত্যার জায়গা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, এই জঙ্গল নাকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
বোনের খোঁজে ডিম্পল ছুটে যায় ঝাড়গ্রামের সেই জঙ্গলে। সেখানে তার পরিচয় হয় শাকিব নামের এক বাংলাদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে। সে এই রহস্যময় জঙ্গল নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং গাইডদের শত বারণ সত্ত্বেও, ডিম্পল তার বোনকে খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর। শেষমেশ শাকিব এবং শমিক নামের একজন গাইডকে সঙ্গে নিয়ে সে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করে।
ঘন জঙ্গলে ঢোকার পর থেকেই পরিবেশ থমথমে হয়ে ওঠে। শমিক তাদের সতর্ক করে দেয় যে এখানে কম্পাস বা কোনও প্রযুক্তি কাজ করে না এবং সূর্যাস্তের আগেই তাদের ফিরতে হবে। কিন্তু অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
জঙ্গলের ফিসফিসানি, ছায়ার আনাগোনা এবং অতীতের দৃশ্যগুলো ডিম্পলকে তাড়া করে বেড়ায়। সে শাকিবকেও সন্দেহ করতে শুরু করে এবং বিশ্বাস করতে থাকে যে তানিয়ার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে শাকিবের কোনও হাত আছে। নির্জন অরণ্যে একা, ডিম্পলকে কেবল অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথেই লড়তে হয় না, বরং নিজের ছোটবেলার সেই ভয়ানক স্মৃতির মুখোমুখিও হতে হয়। শেষ পর্যন্ত কী হবে? সে কি বিভ্রম কাটিয়ে সত্যিটা খুঁজে পাবে, নাকি জঙ্গল তাকেও চিরতরে গ্রাস করে নেবে?
পরিচালকের কথায়, "এই ছবি নিছকই একজন নিখোঁজ মানুষকে খোঁজার গল্প নয়; এটি মানুষের মনের এক গভীর গোলকধাঁধায় নেমে যাওয়ার গল্প, যেখানে ভালবাসা কখনও কখনও দমবন্ধ করা হতে পারে এবং নিরাপত্তা পরিণত হতে পারে বন্দিদশায়। এই ছবির মূলে রয়েছে শৈশবের এক ভয়াবহ আঘাত বা ট্রমা। গল্পের শুরু হয় এক মর্মান্তিক পারিবারিক দুর্ঘটনা দিয়ে, যা দুই বোন—ডিম্পল এবং তানিয়াকে—শোক আর বেঁচে থাকার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে বেঁধে ফেলে। একজন পরিচালক হিসেবে আমি এই আবেগটিকে ভেঙে এর অন্ধকার দিকটি তুলে ধরতে চেয়েছি—যেখানে যত্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অধিকারবোধ কীভাবে প্রিয়জনের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে এবং শেষমেশ এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "এই ছবির পটভূমি, চামসুট্টি জঙ্গল, কেবল একটি লোকেশন বা স্থান নয়; এটি গল্পের এক জীবন্ত খলনায়ক। এটি ডিম্পলের ভেঙে পড়া মানসিক অবস্থার এক রূপক হিসেবে কাজ করে। চিত্রনাট্যটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে দর্শকের বাস্তবতার ধারণাটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
প্রযোজক ডিকে ভারতীর কথায়, "আমি সবসময় এমন গল্পের সন্ধান করি যা পরিচিত সীমানা ভেঙে দেয়। এই স্ক্রিপ্টটি ঠিক সেটাই করে—একটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে পরিণত করে এক ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ হিসেবে। স্ক্রিপ্টটি দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গলের অতিপ্রাকৃত মিথ এবং নায়িকার মানসিক লড়াইকে এমনভাবে মিশিয়ে দেয় যে ছবির ইন্টারেস্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।"
