আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি এনসিআর অঞ্চল থেকে সমস্ত পথকুকুরকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশের পর থেকেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। বহু পশুপ্রেমী বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন একাধিক বলি তারকা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পর্যালোচনা এবং পরিবর্তনের আর্জি নিয়ে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইকে চিঠি লিখলেন অভিনেতা জন আব্রাহাম। সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে সমস্ত পথকুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে স্থায়ীভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার ঠিক এক দিন পরেই মঙ্গলবার (১২ অগস্ট, ২০২৫) এই চিঠি দিলেন অভিনেতা।

পিপল ফর দ্য এথিকাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস (পেটা) ইন্ডিয়ার প্রথম সাম্মানিক ডিরেক্টর, জন চিঠিতে লিখেছেন, কুকুরেরা ‘পথবাসী’ নয়, বরং তারা এই সমাজেরই একটি অংশ এবং অনেকের কাছেই প্রিয়। জন লিখেছেন, “আশা করি আপনি এটা মানবেন যে, এরা নিছক পথবাসী নয়, বরং পাড়ার কুকুর। যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের প্রতিবেশী হিসেবে এই অঞ্চলেই বসবাস করছে তারাও দিল্লিবাসী।”

অভিনেতার আরও দাবি, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশিকা পশু জন্ম নিয়ন্ত্রণ (এবিসি) নিয়মাবলী, ২০২৩ এবং এই বিষয়ে অতীতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। তিনি আরও জানান, এবিসি নিয়মাবলীতে কুকুরদের স্থানচ্যুত করার পরিবর্তে তাদের নির্বীজকরণ, টিকাকরণ এবং যে এলাকা থেকে তাদের আনা হয়েছিল, সেখানেই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। “যেখানে এবিসি কর্মসূচি ঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে সাফল্যও মিলেছে।” এবিষয়ে জয়পুর এবং লখনউয়ের উদাহরণ টানেন অভিনেতা।

জন আরও লিখেছেন, “নির্বীজকরণের সময় কুকুরদের জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। এর ফলে তারা আগের চেয়ে শান্ত স্বভাবের হয়ে ওঠে, মারামারি কমে যায় এবং বাচ্চাদের রক্ষা করার তাগিদ না থাকায় কামড়ানোর প্রবণতাও হ্রাস পায়। পাড়ার কুকুরেরা নিজেদের এলাকা আগলে রাখে বলে বাইরের অচেনা, টিকাবিহীন কুকুরদেরও ঢুকতে বাধা পায়।”
অভিনেতার মতে, রাস্তা থেকে কুকুর সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। “দিল্লিতে আনুমানিক ১০ লক্ষ কুকুর রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো বা অন্যত্র সরানো বাস্তবসম্মত বা মানবিক কোনওটাই নয়,” চিঠিতে উল্লেখ করেন জন।
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
শুধু জন আব্রাহামই নন, জাহ্নবী কপূর, বরুণ ধওয়ান-সহ একাধিক তারকা সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। মালাইকা অরোরা অভিনেত্রী সোফি চৌধুরীর একটি পোস্ট শেয়ার করে এই নির্দেশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মালাইকা লেখেন, তাঁর পোষ্য ক্যাসপারকে তিনি দত্তক নিয়েছেন, ক্যাসপার তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।
আরও পড়ুন: একবার লাগালেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলবে! থ্রি ডি প্রিন্টারে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
জাহ্নবী কাপূর তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, “ওরা বলে বিপদজনক, আমরা বলি ওরা আমাদের হৃদস্পন্দন। আজ সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি-এনসিআর-এর রাস্তা থেকে প্রতিটি পথকুকুরকে ধরে বন্দি করার কথা বলছে। সূর্যের আলো থাকবে না। স্বাধীনতা থাকবে না। থাকবে না সেই চেনা মুখগুলো, যাদের ওরা রোজ সকালে দেখে। কিন্তু ওরা বেওয়ারিশ নয়। ওরা সেই সব প্রাণী, যারা আপনার চায়ের দোকানের বাইরে এক টুকরো বিস্কুটের জন্য বসে থাকে। ওরা দোকানদারদের নীরব রাতের প্রহরী।”
প্রসঙ্গত, সোমবার সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি সরকার এবং গুরুগ্রাম, নয়ডা ও গাজিয়াবাদের পৌরসভাগুলিকে সমস্ত পথকুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানায়, পথকুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক ছড়ানোর কারণে পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ হয়ে উঠেছে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। আদালত দিল্লি কর্তৃপক্ষকে আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৫,০০০ কুকুরের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশও দিয়েছে।